দীপঙ্কর মণ্ডল: পবিত্র রমজান মাস। দিনভর উপোস থেকে সন্ধ্যায় সপরিবারে ইফতার। আর এই সময়ই কিনা বেতন পাচ্ছেন না মিল্লি আল আমিন কলেজের বেশ কয়েকজন অতিথি অধ্যাপক! দারোয়ান, সাফাই কর্মী-সহ কয়েকজন কর্মীও বেতনহীন। মোবাইল, ঘড়ি ও আংটির মত নিত্যব্যবহার্য জিনিস বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কেউ কেউ। এই খবর পেয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা অধ্যাপক বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, “লকডাউনে দু’মুঠো খেতে আমার প্রিয় সহকর্মীরা তাঁদের শেষ সম্বলটুকুও বেচে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আমি মর্মাহত। কলেজের পরিচালন সমিতি এর জন্য দায়ী।”
মিল্লি আল আমিন কলেজের সমস্যা নতুন নয়। কলেজটিকে সংখ্যালঘু তকমা দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বহুদিন ধরে চলছে বিবাদ। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা অধ্যাপক বৈশাখীকে নিয়েও রয়েছে অসূয়া। পরিচালন সমিতির একটি অংশের কাছে তিনি কার্যত ‘অস্পৃশ্য’। তা নিয়ে দুই তরফেই জল গড়িয়েছে বহু দূর। বিকাশ ভবনে সালিশি সভা পর্যন্ত হয়েছে। নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকেও এ বিষয়ে রিপোর্ট দিয়ে এসেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তবু জট কাটেনি। এসবের মাঝেই করোনা সংক্রমণ রুখতে চলছে লকডাউন।
অন্যদিকে, এখন চলছে রমজান মাস। কয়েক দিন পরে ইদ। পবিত্র এই উৎসবের সময় বেশ কয়েকজন অতিথি অধ্যাপক সহ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না। অভাবের তাড়নায় জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাঁদের। কোনও রকমে সংসার চালাতে তাই বাড়ির জিনিসপত্র বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন আল-আমিনের অতিথি অধ্যাপক ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীরা।
ইসলামিক ইতিহাস, উর্দু ও প্রাণিবিদ্যার মহিলা অতিথি অধ্যাপকরা বেশ কয়েক মাস ধরে বেতনহীন। আংশিক সময়ের অধ্যাপক ও কর্মীদেরও বেতন নেই। কিন্তু কেন এই অচলাবস্থা? কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা জানিয়েছেন, “আমি প্রত্যেক ইদে সবার হাতে ব্যক্তিগতভাবে কিছু তুলে দিই। কিন্তু এবার যে কী হবে বুঝতে পারছি না। হরেকৃষ্ণ কোঙার রোড Containment Zone ঘোষণা হওয়ায় সেখানে যেতেও পারছি না। সরকার সবাইকে টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তা মানা হচ্ছে না। অন্যদিকে খবর পাচ্ছি কলেজ খুলে উন্নয়নের নামে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।”
কলেজের পরিচালন সমিতির মেয়াদ অনেকদিন আগেই শেষ হয়েছে। কলেজের অচলাবস্থা নিয়ে কথা বলার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের নিয়ে তৈরি হয়েছে মিল্লি আল আমিন কলেজ বাঁচাও কমিটি। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মহম্মদ হোসেন রিজভী জানিয়েছেন, “২০১২ সাল থেকে মিল্লি আল আমিন কলেজে সমস্যা চলছে। ক্রমশ ছাত্রী সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এই অবস্থা চললে একসময় কলেজটি বন্ধ হয়ে যাবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.