মণিশংকর চৌধুরি: কলেজের অন্তহীন সমস্যার কোনও সমাধান নেই। তার চেষ্টা করে ক্লান্ত বোধ করছেন। একথা জানিয়েই চাকরি থেকে অব্যাহতি নিলেন মিল্লি আল আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের ইস্তফাপত্র ই-মেলে পাঠিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন তিনি। কিছুটা অভিমানী সুরে বললেন আরও বেশ কিছু সমস্যার কথা। তাঁর অনুপস্থিতিতে কলেজের সমস্ত সমস্যা কেটে যাক, সেই শুভেচ্ছা জানাতেও ভুললেন না। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাকরি থেকে ইস্তফা নতুন এক সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের।
রাজনীতি বনাম প্রশাসনিক চাপানউতোর, নাকি সত্যিই সমস্যা সমাধানে আর কোনও পথ খুঁজে না পাওয়া? – ঠিক কী কারণে এতদিনের প্রতিষ্ঠিত পেশার জীবন থেকে ছুটি নিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়? মিল্লি আল আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা অবশ্য বিশেষ কোনও জটিলতায় গেলেন না। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের প্রতিনিধিকে তিনি সংক্ষেপেই জানালেন, ‘এত সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে, তার শেষ নেই। আমি বারবার চেষ্টা করেও সমাধান করে উঠতে পারিনি। ক্লান্ত লাগছে। তাই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছি। হয়ত আমি চাকরিটা ছেড়ে দেওয়ার পর এগুলোর সমাধান হয়ে যাবে।’ এই কথার রেশ ধরেই তিনি আরও জানালেন, ‘কলেজের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একাংশ হয়ত চাইছেন না যে কলেজ ঠিকমতো চলুক। তাই তাঁরা আমার কাজে ঠিকঠাক সহযোগিতা করছেন না। আমার নিজের তো মনে হচ্ছে যে আমি আছি বলেই এমনটা হচ্ছে। আমার থেকে কী লাভ? এটুকু বলতে পারি যে আমি অত্যন্ত ক্লান্ত। আমার নৈতিক দায়িত্ব যে পদত্যাগ করা দরকার।’
কিন্তু কী এমন সমস্যা মিল্লি আল আমিন কলেজে? বৈশাখীদেবী জানালেন যে গত ৬ মাস ধরে কলেজের অশিক্ষক কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না। গত ২২ মাস ধরে কলেজের গভর্নিং বডির বৈঠক বসেনি। জানালেন যে শিক্ষা দপ্তরে বারবার চিঠি লিখেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা। কখনও ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করে সমাধানের চেষ্টা হয়েছে, আরও নানা পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও সমাধান হয়নি। তবে এর জন্য বিশেষভাবে কাউকে দায়ী করতে নারাজ বৈশাখীদেবী। বরং শিক্ষাদপ্তর এবং শিক্ষামন্ত্রীদের যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছেন বলেই জানালেন। তাঁর কথায়, ‘শিক্ষামন্ত্রীরা – সত্যসাধন চক্রবর্তীই হোন বা ব্রাত্য বসু বা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তাঁরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। কলেজের অন্যান্য সহকর্মীরা আমাকে সমর্থন করেছেন। পাওয়া বলতে এটাই যে সকলে আমাকে ভালবেসেছেন, ভরসা করেছেন।’
বৈশাখীদেবী নিজেই জানিয়েছেন যে তিনি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ৬ থেকে ৮ বার দেখা করেছেন। সম্প্রতি তাঁকে মিল্লি আল আমিন কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদক পদেও বসানো হয়েছিল। নতুন দায়িত্ব পেয়ে তা ভালভাবে পালন করার অঙ্গীকারও করেছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা। কিন্তু এত স্বল্প সময়ের মধ্যে কী এমন হল যাতে চাকরিই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? এই প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.