সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মধ্য কলকাতার মিল্লি আল-আমিন কলেজ (ফর গার্লস)-এর পরিচালন সমিতির সম্পাদক পদে বসানো হয়েছে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তা নিয়ে ফের সরগরম শিক্ষা ও রাজনৈতিক মহল। রাজনৈতিক মহলের মতে, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের দূরত্ব কমেছে। এবার তাই বৈশাখীদেবীকে কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদক করে ‘পুনর্বাসনের’ ব্যবস্থা করা হল।
তবে প্রশাসনিক মহল মনে করছে, এই ঘটনায় পুনর্বাসন তত্ত্ব খাটে না। কারণ, কলেজের প্রশাসনিক পরিচালনার ক্ষেত্রে যিনি কলেজে টিচার-ইন-চার্জ থাকেন তিনিই সম্পাদক হন। সেটাই কার্যত নিয়ম। তা না করা হলেই বরং প্রশাসনিক ত্রুটি হত। তাঁদের মতে, বৈশাখীদেবীর সম্পাদক হওয়ার মধ্যে আদৌ কোনও ‘পুনর্বাসন’ হয়নি, যা হয়েছে সেটি স্রেফ একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া মাত্র। রাজনৈতিক সংগঠনের কোনও পদ তাঁকে দেওয়া হয়নি। তাই এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি শিক্ষা দফতরের প্রশাসনিক পদক্ষেপ।
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিষয়টি যদি দ্বন্দ্ব মেটানোর হত, তাহলে ওয়েবকুপার মতো রাজনৈতিক সংগঠনের বিজয়া সম্মিলনীতে প্রাক্তন সম্পাদক হিসাবে বৈশাখীদেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হত। বিভিন্ন ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে, তৃণমূলের রাজনৈতিক কোনও মঞ্চ নয়, সাংস্কৃতিক মঞ্চেই তাঁকে ডাকা হচ্ছে। প্রশাসনিক স্তরে তাঁকে সব ধরনের সাহায্য করা হলেও রাজনৈতিক মঞ্চে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হলে দলীয় স্তরে সমস্যা হতে পারে বলে যা শোনা যাচ্ছে, তার জন্যই কি এমন পদক্ষেপ, প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের। এ নিয়ে বৈশাখীদেবীর বক্তব্য, “শিক্ষামন্ত্রী আমাকে কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদক পদে বসিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূলের দলীয় শিক্ষা সংগঠনে আমি কোনও পদে নেই। এমনকী ওয়েবকুপার বিজয়া সম্মিলনীতেও ডাকা হয়নি। তাই কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদক হওয়া কোনও রাজনৈতিক পুনর্বাসন হতে পারে না।”
শিক্ষাদপ্তর সূত্রে খবর, আইনি জটিলতায় মিল্লি আল-আমিন কলেজে দীর্ঘদিন কোনও পরিচালন সমিতিই ছিল না। সম্প্রতি নতুন করে পরিচালন সমিতি গঠন করে দেয় শিক্ষা দফতর। পরিচালন সমিতির সম্পাদক করা হয় বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সভাপতি হন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর আমিরুদ্দিন ববি। এরপরই বৈশাখীদেবীর নিয়ন্ত্রণ কলেজের উপরে আরও বাড়ল বলে মনে করা হচ্ছে। শিক্ষা দফতরের এই পদক্ষেপের নেপথ্যে রাজনৈতিক সমীকরণ কাজ করছে বলে পর্যবেক্ষকদের মত।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় চলতি বছরের আগস্টে মিল্লি আল-আমিন কলেজ (ফর গার্লস)-এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর কলেজের এক শিক্ষিকা তাঁকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অপমান ও হেনস্তা করছেন বলে অভিযোগই তুলেছিলেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়ে বৈশাখীদেবী ইস্তফাপত্রও জমা দেন। পার্থবাবু সে ইস্তফাও না নিয়ে বৈশাখীদেবীকে আশ্বস্ত করেন যে, সব অভিযোগ তিনি খতিয়ে দেখবেন এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ করবেন।
এরপর শোভন-বৈশাখীর বিজেপিতে যোগ দেওয়া এবং পরবর্তী সময়ে ভাইফোঁটার দিন মমতার বাড়িতে শোভন-বৈশাখীর হাজির হওয়া বা মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়া তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব কমার ইঙ্গিত স্পষ্ট করেছে। এবার বৈশাখীদেবীকে পরিচালন সমিতির সম্পাদক করা তাই ফের জল্পনা উসকে দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও কলেজের সমস্যা সমাধানের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি। এর মধ্যে তিনি বেশ কয়েকবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেছেন। তা কোনও রাজনৈতিক সাক্ষাৎ নয়, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা বলেই দাবি বৈশাখীদেবীর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.