দীপঙ্কর মণ্ডল: সামনে পুরভোট, তারপরই একুশে বিধানসভার মহাযুদ্ধ। তার আগে কি তৃণমূলের ফিরবেন দলের দীর্ঘদিনের যোদ্ধা শোভন চট্টোপাধ্যায়? এই জল্পনা ফের উসকে দিল মিল্লি আল আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা তথা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বন্ধু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। আজ, বৃহস্পতিবার তিনি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অফিসে যান বৈঠক করতে। ঘণ্টা দেড়েক ধরে শিক্ষা ও রাজনীতি সংক্রান্ত আলোচনা হয় উভয়ের মধ্যে। আলোচনার পর বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বৈশাখী। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে কি প্রত্যাবর্তন হচ্ছে তাঁদের দু’জনের? এই প্রশ্ন শুনে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় রহস্য জিইয়ে রেখেই উত্তর দেন, ‘কিছুদিন অপেক্ষা করুন। আমার মতো সামান্য শিক্ষিকার বিজেপিতে দরকার নেই। তাই বিজেপিতে আমি থাকলাম কি না থাকলাম, তাতে বিজেপির কিছু যায় আসে না।’
তৃণমূলের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায় কিংবা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বহুদিনের। যার জেরে তাঁরা দু’জনেই দিল্লি গিয়ে আনু্ষ্ঠানিতভাবে বিজেপিতে যোগ দেন। তার কয়েকদিন পরই অবশ্য পট বদল হতে থাকে ধীরে ধীরে। ভাইফোঁটার দিন কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান শোভন চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বন্ধু বৈশাখীও। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে ফোঁটাও নেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। এছাড়া নানা সময়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের যোগাযোগ বজায় রাখার মতো ঘটনাপ্রবাহ থেকে বিশেষজ্ঞদের মনে সংশয় দানা বাঁধছিলই যে গেরুয়া শিবির ছেড়ে পুরনো দলে ফেরার দিন এগিয়ে এল কি? বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও একাধিকবার বিজেপি নেতৃত্বের কথায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। বোঝাই যাচ্ছিল, তরঙ্গ ঠিক মিলছে না, বেসুরো হচ্ছে।
এরপর নিজের কলেজের একাধিক জট নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বারবার বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক এবং পাশে থাকার আশ্বাসে ইঙ্গিত খানিকটা স্পষ্ট হচ্ছিল, যে দূরত্ব বেড়ে গিয়েছিল, তা ধীরে ধীরে অনেকটাই কমেছে। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয়বারের জন্য মিল্লি আল আমিন কলেজের সমস্যা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় তিনটে নাগাদ তিনি শিক্ষামন্ত্রীর অফিসে পৌঁছন। সেখান থেকে যখন বেরন, ঘড়িতে তখন সাড়ে চারটে কাঁটা পেরিয়ে গিয়েছে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কলেজে নানা সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে গভর্নিং বডি নেই, তাই আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। ওনাকে সব জানালাম। উনি আশ্বাস দিয়েছেন যে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। উনি সবসময়েই আমাদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছেন।আমরা এতজন যে আজ কাজ করছি, তা ওনারই জন্য।’ শোভনবাবুর সঙ্গে কি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আলোচনা, কথাবার্তা হয়? এর উত্তরে বৈশাখীদেবী বলেন, ‘ওনারা দীর্ঘদিনের সহকর্মী। এক সহকর্মীর সঙ্গে আরেকজনের কথাবার্তা হবে, সেটাই স্বাভাবিক। না হলেই অস্বাভাবিক। তবে কী কথাবার্তা, তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব না।’
শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কৃতজ্ঞতা মিশ্রিত বক্তব্য শুনে ওয়াকিবহাল মহল কিছুটা বিস্মিতও। একসময়ে ওয়েবকুপার শীর্ষ পদে থাকলেও, এই মুহূর্তে বৈশাখীর সেই পদ নেই। তা সত্ত্বেও এতটা সময় দিয়ে তাঁর কথা শোনা এবং রাজনৈতিক মত বিনিময় করাকে তাঁরা এক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন। সেই জল্পনা অবশ্য উড়িয়ে দেননি খোদ শিক্ষামন্ত্রীও। বৈশাখী কি ফের ওয়েবকুপার সদস্য হতে চলেছেন? এই প্রশ্নের উত্তর তিনি একপ্রকার এড়িয়ে গিয়েই জানিয়েছেন যে সংগঠনে কে ফিরছেন, কে ফিরছেন না – সে বিষয় নিয়ে বলা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। উভয়পক্ষের প্রতিক্রিয়াকে একসূত্রে এনেই অভিজ্ঞ মহলের ধারণা আরও মজবুত হচ্ছে যে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলে ফেরা একপ্রকার নিশ্চিত। তা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.