কৃষ্ণকুমার দাস ও অভিরূপ দাস: থিকথিকে ভিড়। গিজগিজ করল মাথা। কাতারে কাতারে মানুষের ঢল চৌরাস্তায়। বেহালায় নাকি কেউ আসবে না? মুচকি হাসেন সুরুচি সংঘের এক স্বেচ্ছাসেবক। গোটা নবমীর বিকেলটায় যিনি এক কাপ চাও খেতে পারেননি ভিড়ের ঠ্যালায়।
বেহালা এবার জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। কেউ আসতে পারবে না। মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ায় এমনটাই আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। পুজোর উদ্যোক্তারা ভাবছিলেন তবে কি সাজানো মণ্ডপ খাঁ খাঁ করবে? পুজোর কলকাতায় ফি বছর সুরুচি সংঘ খুঁটিপুজো, হোর্ডিং, থিম সং-সহ অনেক অভিনব আয়োজন ও নতুনত্বের প্রবর্তক। প্রতিবছর সুরুচির মণ্ডপ দেখার জন্য মধ্যরাতে ভিআইপিতেও দীর্ঘ লাইন পড়ে। মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর সুরুচির লাগোয়া সেই নিউআলিপুরে যানজটে হাঁসফাঁস করছিল জনতা। কর্মকর্তাদের কপালে তখন চওড়া ভাঁজ।
[ কার্নিভালে আসবেন রেকর্ড বিদেশি, দূষণ-নিয়ন্ত্রণে সতর্ক পুলিশ ও পুরসভা]
আশঙ্কায় জল ঢেলে প্রথম কাজটা শুরু করেছিল রাজ্য সরকার। মাঝেরহাটে সেতু ভাঙার ৩৮ দিনের মধ্যেই বেইলি ব্রিজ, লেভেল ক্রসিং, বিকল্প রাস্তা তৈরি করে। কলকাতার সঙ্গে বেহালার সরাসরি যোগাযোগের জন্য নিউ আলিপুরের কাছে খুলে দেওয়া হয়েছিল দু’টি বেইলি ব্রিজ। ৮০ ফুট লম্বা এবং সাড়ে ৪ ফুট চওড়া বেইলি ব্রিজের সঙ্গেই চালু হয়ে গিয়েছিল মাঝেরহাট এবং নিউ আলিপুরের স্টেশনের মধ্যে তৈরি হওয়া নতুন লেভেল ক্রসিং। পুজোর প্রথম দিন থেকেই আশঙ্কার কবরে দ্বিতীয় পেরেক পুঁতে দিল উৎসব পাগল জনতা। নবমীর বিকেলে বেহালার প্রতিটি পুজোয় পাগল করা যে ভিড় দেখা গেল তাতে পরিষ্কার ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পুরনো স্মৃতি মুছে ফেলেছেন সকলে। রাজ্য সরকারকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানিয়ে বুড়ো শিবতলার পঞ্চানন মালাকার জানিয়েছেন, “মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পর প্রমাদ গুনেছিলাম। এবার বোধহয় পুজোটা মাটি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অসংখ্য ধন্যবাদ। যেভাবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ব্রিজটা তৈরি করলেন।” পঞ্চাননবাবুর মতো অনেকেই বেহালা থেকে সহজেই বেইলি ব্রিজ হয়ে পৌঁছে গিয়েছেন দক্ষিণের গড়িয়াহাটে। অন্যদিকে দক্ষিণ শহরতলি থেকেও কাতারে কাতারে মানুষ এসেছেন বেহালায়।
পুজোর আগেই তৃতীয়ার দিন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বেইলি ব্রিজ উদ্বোধন করে বলেছিলেন, “এই ব্রিজ চালু হয়ে যাওয়ায় যানজটের সমস্যা অনেকটাই কমবে। স্বস্তি পাবেন মানুষ। সুবিধে হবে দর্শনার্থীদেরও।” তা যে একচিলতেও ভুল নয় ষষ্ঠীর বোধনের দিন থেকেই পরিষ্কার। দুটি বেইলি ব্রিজের একটি দিয়ে নিউ আলিপুর অ্যাভিনিউ হয়ে হুমায়ুন কবির সরণি এবং অন্যটি দিয়ে হুমায়ুন কবির সরণি হয়ে নিউ আলিপুর অ্যাভিনিউ যাওয়া যাচ্ছে। কলকাতা পুলিশের নিয়ম অনুযায়ী সেখান দিয়ে ভারী কোনও গাড়ি চলাচল করতে পারবে না। এই সেতু দিয়ে দু’চাকা, চার চাকার গাড়ি যেতে পারবে। বেইলি ব্রিজ দিয়ে সর্বোচ্চ ৮০–১০০ টন ওজন বহন করা যাবে। ১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় গতিবেগে গাড়ি যাতায়াত করতে পারবে। ব্রিজটি তৈরি করেছে গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স। তবে শুধু পুজোই নয়, পুজোর পরেও নিত্যদিনের যাতায়াতে বেইলি ব্রিজ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে তা এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন সকলে।
ছবি: অমিত ঘোষ
[দশমীতে বিষাদের সুর, মাকে বরণ করে সিঁদুরখেলায় মাতল বাঙালি]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.