কলহার মুখোপাধ্যায়: খুন না আত্মহত্যা, কীসের পরিণতিতে বাগুইআটির অন্তরা আচার্যর মৃত্যু হল, তা এখন তদন্তসাপেক্ষ। এর মধ্যেই অন্তরার বন্ধু তথা প্রাক্তন প্রেমিকের খোঁজ পেল পুলিশ। অন্তরার সঙ্গে তাঁর স্বামী সুরজিৎ সরকারের সম্পর্কের অবনতির অনেক আগেই যাঁর আবির্ভাব। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতিই এই তৃতীয় ব্যক্তির সঙ্গে নতুন করে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে থাকতে পারে বলে অনুমান পুলিশের। তাই অন্তরার মৃত্যুর পিছনে তাঁরও জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।
সোমবার রাতে অন্তরার প্রাক্তন প্রেমিক এই তৃতীয় ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বাগুইআটি থানার পুলিশ। ২৮ নভেম্বর রঘুনাথপুরের ফ্ল্যাটে অন্তরার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। জানা গিয়েছে, তার আগে টানা দশদিন ধরে ৯৭ বার এই তৃতীয় ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন অন্তরা। তাঁর বন্ধুই সে কথা জানিয়েছেন পুলিশকে। একইসঙ্গে জানিয়েছেন, সুরজিতের অনুপস্থিতিতে একদিন প্রায় ৪ ঘণ্টা অন্তরার সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন তিনি। এই সময়গুলোতেই স্বামীর সঙ্গে যাবতীয় অশান্তির কথা অন্তরা তাঁর বন্ধুকে খুলে বলত বলে জেরায় জানিয়েছেন তিনি।
[অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে লাগাতার ‘ধর্ষণ’, স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মহিলা]
কিন্তু এই তৃতীয় ব্যক্তির সঙ্গে অন্তরার যোগাযোগ হল কীভাবে? পুলিশকে সব খুলেই জানিয়েছেন অন্তরার বন্ধু। জানা গিয়েছে, প্রথমে এই বন্ধুকেই অন্তরা বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু অন্তরার সঙ্গে এই সম্পর্ক তাঁর বাবা-মা মেনে নেননি। পরে সুরজিতের সঙ্গে অন্তরার বিয়ে হয়। সুরজিতের সঙ্গেও কর্মসূত্রে পরিচয় ছিল এই ব্যক্তির। যার ফলে বিয়ের পর নতুন করে তিনজনের পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। সুরজিতের সঙ্গে এই ব্যক্তি ব্যবসায়িক কারণে একটা সময় একসঙ্গে কাজ করার কথাও জানায়। কিন্তু আর্থিক সম্বল না থাকায় সরে যান তিনি। সে সময়ে সম্পর্কের অবনতি হলেও পরে নিজের স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে ফের অন্তরার ঘনিষ্ঠ হন এই ব্যক্তি। এর পরই অন্তরার সঙ্গে সুরজিতের অনুপস্থিতিতে তাঁদের ফ্ল্যাটে দীর্ঘ সময় কাটানোর কথাও জানায় পুলিশকে।
এই পরিস্থিতিতেই অন্তরার মৃত্যুর পিছনে এই তৃতীয় ব্যক্তির হাত থাকার সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। আপাতত অন্তরাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তাঁর স্বামী সুরজিৎকে হেফাজতে নিয়েছে। অন্তরার মৃত্যুর পর তাঁর ফ্ল্যাটে থাকা জিনিসও উদ্ধার করেছে পুলিশ। জানা যাচ্ছে, অন্তরার আত্মহত্যার জন্য দু’টি টুলের সাহায্য নিয়েছিল। সে দু’টি উদ্ধারের পর তাঁদের ঘর থেকে একটি অ্যালুমিনিয়ামের মইও পেয়েছে পুলিশ। তাদের একাংশের সন্দেহ, এই মই ছেড়ে আত্মহত্যার জন্য টুল ব্যবহার নিয়ে। তাদের মতে, এখানেই অন্তরার স্বামী বা ওই তৃতীয় ব্যক্তি কোনওভাবে জড়িত থাকতে পারেন। এই মুহূর্তে যদিও সরাসরি অন্তরার স্বামীকেই কাঠগড়ায় রেখে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, ঘটনার দিন বিকেলে প্রথমে ফোনে না পেয়ে ফ্ল্যাটের নিরাপত্তারক্ষীকে দিয়ে খবর নেন সুরজিৎ। কিন্তু তখনও কোনও উত্তর মেলেনি। এর পর আর স্ত্রীর কোনও খবর নেওয়ার চেষ্টা করেননি সুরজিৎ। রাতে ফিরে এসে ফ্ল্যাটে স্ত্রীর ঝুলন্ত দেহ দেখে বিস্মিত হয়ে যান।
[প্রকাশনা সংস্থার বিজ্ঞাপনী চমক রুখতে আসরে শিক্ষামন্ত্রী, পর্ষদকে সতর্কবার্তা]
এর মধ্যেই খবর, ওইদিন বিকেলে নিজের এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল অন্তরার। ফলে ওইদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ওই সময়টুকুর মধ্যে কী ঘটে থাকতে পারে, তা নিয়েই সন্দিহান পুলিশ। আবার ওই সময়ের মধ্যেই যা ঘটনার ঘটনার ঘটেছে বলে একইসঙ্গে পুলিশ নিশ্চিতও। ফলে আপাতত তদন্তের স্বার্থে এতগুলি দিক খুলে রেখে অন্তরার স্বামীকে অভিযোগের মুখে রেখেই এই ঘটনার তদন্ত চালাতে চাইছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.