সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্য সরকার বিশেষ সম্মাননা গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছিল। কোনও সাড়া মেলেনি তাঁর। শেষমেশ দ্বিধা কাটিয়ে তাঁর মৌনতাকে অসম্মতি বলেই ধরে নিয়েই পুরস্কার প্রাপকের চূড়ান্ত তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। এবার সেই একই ব্যক্তিকে পুরস্কার দিল বঙ্গ সিপিএম (CPM)নেতৃত্ব। তিনি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন (Amartya Sen)। সপ্তাহ দুই আগেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারের ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কারে তাঁকে সম্মানিত করা যায়নি। কিন্তু তাঁর লেখা একটি বইয়ের জন্য মুজফ্ফর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন নোবেলজয়ী। আর তার ঠিক পরই অমর্ত্য সেনকে কটাক্ষ করলেন রাজ্যের নতুন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo)। তাঁর দাবি, অমর্ত্য সেন তো একজন পর্যটক। একটি রাজনৈতিক রঙের বাইরে বেরতে পারেননি।
অমর্ত্য সেনের রাজনৈতিক সমর্থন অজানা নয়। তিনি বরাবর বামপন্থী (Left) সমর্থক। এমনকী আজকের মোদি সরকারের সঙ্গেও তাঁর দূরত্ব এতটাই যে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সরকারের বিরোধিতায় কলম ধরতেও পিছপা হননি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তাঁর এই ভূমিকার জন্য বিজেপির ছোট, বড় নেতা নানা সময়ে তাঁকে কড়া ভাষায় আক্রমণে বিদ্ধ করেছেন। আবার রাজ্যের তৃণমূল সরকারের সঙ্গে অমর্ত্য সেনের প্রায় সমান দূরত্ব। প্রবীণ নোবেলজয়ী কদাচিৎ কলকাতা কিংবা শান্তিনিকেতনে তাঁর বাড়িতে এলেও মূলত একা থাকাই পছন্দ করেন। সরকারের তরফেও কোনওরকম সংবর্ধনা কিংবা সুযোগ সুবিধা সাধারণত গ্রহণ করেন না।
তৃণমূল-বিজেপির থেকে সমান দূরত্বে থাকা অমর্ত্য সেন নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ মেনে চলেছেন বরাবর। সম্ভবত সেই কারণেই তাঁর বই ‘জগৎকুটির’-এর (Home into the World: A Memoir) জন্য সিপিএমের তরফে মুজফ্ফর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হল, তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেননি। নিজে সশরীরে এসে পুরস্কার নিতে না পারলেও তাঁর ‘প্রতীচী’ ট্রাস্টের ডিরেক্টরের হাতে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই বালিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বিঁধলেন অমর্ত্য সেনকে। বাবুলের কথায়, ”উনি একটি নির্দিষ্ট পথে রাজনীতি করেন, যার সঙ্গে আমাদের রাজনীতির কোনও মিল নেই। উনি ওঁর মত ভাবেন, কাজ করেন। সেসব নিয়ে কিছু বলার নেই। তবে উনি তো পর্যটক। এত বড় অর্থনীতিবিদ হওয়ার পরও বারবার বুঝিয়ে দেন যে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক রঙের বাইরে বেরতে পারেননি।”
নোবেলজয়ীকে নিয়ে বাবুল সুপ্রিয় এহেন মন্তব্যের নিন্দা করেছেন অনেকেই। কারও কারও পালটা কটাক্ষ, বিজেপির লাইনে হেঁটেই বাবুল সুপ্রিয় এধরনের মন্তব্য করেছেন। সম্ভবত ভুলে গিয়েছেন যে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের প্রতি রাজ্য সরকারের স্বতঃস্ফূর্ত শ্রদ্ধা আছে, তা সে যতই তিনি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করুন না কেন। এ নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ”আমি জানি না, তিনি কী বলেছেন। অমর্ত্য সেন অবশ্যই কৃতী বাঙালি। অমর্ত্য সেন বাংলার গর্ব। তাঁকে কোনওরকম কটাক্ষ করা বা এমন কোনও মন্তব্য করা যাতে তাঁর সম্মানহানি হয়, সেটা কখনওই ঠিক নয়। অমর্ত্য সেনের সঙ্গে এর আগের পুরস্কারের ক্ষেত্রে কোনওরকম যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছিল কিনা সেটাও আমরা ঠিক নিশ্চিতভাবে জানি না। কোন পুরস্কার নেবেন কোন পুরস্কার নিতে পারছেন না এ বিষয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.