ছবিটি প্রতীকী
মনিশংকর চৌধুরি ও সৌম্য মুখোপাধ্যায়: কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের গন্ডগোল পাকানোর অভিযোগ তুলে পডুয়াদের বিক্ষোভ মিছিল। অথচ এই ইস্যুতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআইয়ের মিছিল থেকে ফের উঠল ‘আজাদি’ স্লোগান। কেউ গলা তুললেন বিজেপি শাসন থেকে ‘আজাদি’, তো কেউ সুর চড়ালেন রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা থেকে ‘আজাদি’। এবং তা হিন্দি, যে হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব শুনে সবচেয়ে আগে গর্জে উঠেছিলেন বামপন্থীরাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গন্ডগোল, বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদে ‘আজাদি’ স্লোগান কেন, তা নিয়েই নতুন বিতর্ক তৈরি হল শুক্রবার।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেখানে গিয়ে একদল পড়ুয়ার হাতে নিন্দাজনকভাবে হেনস্তা হতে হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে। গেটের বাইরেই তিনি দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ ছিলেন। অশালীন ভাষায় তাঁর উদ্দেশে গালিগালাজও করা হয়। যাদবপুরের মতো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য বাবুল সুপ্রিয়কেই দায়ী করেছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন এসএফআই। শুক্রবার কতার প্রতিবাদেই মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন সদস্যরা। এদিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয় মিছিল। ২ নং গেট পেরিয়ে, এইট বি বাসস্ট্যান্ড হয়ে মিছিল সোজা গোলপার্কের দিতে এগিয়ে যায়। বিজেপি, আরএসএস বিরোধী স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পথঘাট। মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া সদস্যদের হাতে ধরা ব্যানারে ছিল ফ্যাসিবাদ বিরোধী লেখা। মিছিল থেকে কোনও রকম অশান্তি যাতে না হয়, তার জন্য গোটা রাস্তা জুড়েই পুলিশি টহল ছিল নজরে পড়ার মতো। কিছুক্ষণের জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত গড়িয়াহাট রোডে যানজট হলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই তা স্বাভাবিক হয়ে যায়।
শুধু বিজেপি বা আরএসএস বিরোধীই নয়, দলিতদের উপর অত্যাচারের নমুনা তুলে ধরতে মিছিল থেকে রোহিত ভেমুলার নামেও ওঠে স্লোগান। বাদ যায়নি গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত জুনেইদের নামও। কিন্তু এর পাশাপাশিই যে স্লোগানে খটকা লাগে, তা হল ‘আজাদি’। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ছাত্রছাত্রী কিংবা সংগঠন এসএফআইয়ের মুখে ‘আজাদি’ স্লোগান নতুন কিছু নয়। আগে তাঁদের মুখে ‘কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি’ – এমন স্লোগান শোনারও সাক্ষী কলকাতাবাসী। কিন্তু এই ইস্যুতে কেন এমন দাবি, তা নিয়ে বিতর্ক উঠছেই। অনেকেই মনে করছেন, বাম এবং অতিবাম মনোভাবাপন্ন পড়ুয়াদের মুখে এই ‘আজাদি’ স্লোগান আসলে দেশের সার্বভৌমত্বের ধারণা নষ্ট করে বিচ্ছিন্নতাবাদকে মদত দেওয়ার অস্ত্র। ঠিক যেভাবে কাশ্মীরে স্বাধীনতার জন্য স্লোগান উঠেছিল। এনিয়ে অবশ্য বামপন্থীরা বলছেন অন্য কথা। তাঁদের একাংশের সাফাই, ‘আজাদি’ স্লোগানের মধ্যে কোনও বিচ্ছিন্নতার মনোভাব নেই। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যেভাবে মানুষের সাধারণ জীবনযাপনকে বেঁধে দিতে চাইছে, তাতে স্বাধীনতা থাকছে না। এই জায়গা থেকে বেরতে চেয়েই তাঁদের এই স্লোগান।
আরও উল্লেখযোগ্য, এসএফআইয়ের মিছিলের প্রথমদিকে বাংলায় সমস্বরে নিজেদের দাবি জানালেও, পরের দিকে হিন্দিতেও স্লোগান শোনা গেল। যে হিন্দি ভাষার আগ্রাসন নিয়ে বামপন্থীরাই সবচেয়ে বেশি সরব, তাঁদেরই মিছিলে হিন্দি কেন? এই প্রশ্নও উঠল কোনও কোনও মহলে? তবে কি বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের ঘরানাও পালটে যাচ্ছে? হিন্দিকে এখন আর তত দূরের বলে মনে হচ্ছে না? তাই কি কলকাতার বুকে দাঁড়িয়েও দেশের অন্যান্য প্রান্তের মতো অনায়াসে হিন্দিতে স্লোগান তুলছে এসএফআই নেতৃত্ব?
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.