স্টাফ রিপোর্টার: ফের শহরে অটো দৌরাত্ম্য৷ এবার অটো দৌরাত্ম্যের শিকার হলেন এক গৃহবধূ৷ শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে মানিকতলা থানা এলাকায়৷ এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন সোমা পাল নামে ওই গৃহবধূ৷ অটোচালকের হাতে মায়ের হেনস্তা হওয়ার পুরো ঘটনার সাক্ষী হল সাত বছরের শিশুকন্যা রূপসা৷ ঘটনায় পুলিশ রাজ ওরফে জয় চক্রবর্তী নামে অভিযুক্ত অটোচালককে গ্রেফতার করেছে৷
পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার রাত ন’টা নাগাদ মেয়েকে নিয়ে সোমাদেবী শোভাবাজার থেকে তেলেঙ্গাবাগান যাওয়ার জন্য অটোয় ওঠেন৷ মানিকতলার কাছে আসতেই সোমাদেবীর মনে পড়ে বাড়িতে মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে হবে৷ সেই জন্য তিনি অটোচালককে মানিকতলা মোড়ে নামিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন৷ অটোচালক মানিকতলা মোড়ে নামাতে রাজি হলেও পুরো তেলেঙ্গাবাগান যাওয়ার ভাড়া চেয়ে বসেন৷
সোমাদেবী জানান, শোভাবাজার থেকে মানিকতলা যাওয়ার জন্য দু’জনের ভাড়া ১২ টাকা৷ কিন্তু তেলেঙ্গাবাগান পর্যন্ত সেই ভাড়া ২০টাকা৷ ইতিমধ্যে মেয়ে রূপসাকে অটো থেকে নামিয়ে ফুটপাথে দাঁড়াতে বলেন সোমাদেবী৷ নিজে তখনও অটোর ভিতর বসে ভাড়া মেটাতে ব্যস্ত৷ অভিযোগ, সেই সময় অটোচালক রাজ সোমাদেবীর কাছ থেকে ২০ টাকাই দাবি করেন৷ কারণ হিসাবে অটোচালক সোমাদেবীকে জানান, যেহেতু অটোতে ওঠার আগে তেলেঙ্গাবাগান যাবেন বলেছিলেন তাই পুরো ভাড়াই লাগবে৷
এতেই প্রতিবাদ করে ওঠেন সোমদেবী৷ তিনি বলেন, আমি মানিকতলায় নামলে কেন পুরো ভাড়া গুনতে হবে৷ এর পর সোমাদেবী কুড়ি টাকা নোট দিয়ে ব্যালান্স ফেরত চান৷ অভিযোগ এর পরই কিছু না বলেই অটো ছেড়ে দেন অভিযুক্ত চালক৷ তখন সোমাদেবীর একটি পা মাটিতে৷ শরীরের বাকি অংশ অটোর ভিতরে৷ এই অবস্থায় কোনওক্রমে তিনি অটোর রডটি ধরে নেন৷
ঘটনার আকস্মিকতায় চিৎকার করতে শুরু করেন সোমদেবী৷ মাকে হেনস্তা করার পুরো ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট রূপসাও চিৎকার করতে শুরু করে৷ এর পর অটোটি মাঝ রাস্তা দিয়ে ‘জিগ-জ্যাগ’ ভাবে চলতে শুরু করে৷ কিছুটা দূর যাওয়ার পর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে অটো থেকে ছিটকে পড়েন সোমাদেবী৷ ততক্ষণে মা ও মেয়ের চিৎকারে বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় বাসিন্দাদের৷ এর পর তাঁরাই অটোটিকে ধরে ফেলেন৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ৷ অটোচালকের বিরুদ্ধে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো ছাড়াও একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ আজ অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হবে৷
সোমাদেবী রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পর তাঁকে ও রূপসাকে উদ্ধার করে স্থানীয়রাই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান৷ সেখানেই প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয় সোমাদেবীকে৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, যেভাবে মাঝ রাস্তায় সোমাদেবী পড়ে গিয়েছেন কপাল জোরে তিনি বেঁচে গিয়েছেন৷ কারণ, সেই সময় পিছন থেকে কোনও বাস এসে পড়লেই চাপা পড়তে হত সোমাদেবীকে৷ রাতে বাড়ি ফেরার পথে ছোট্ট রূপসার চোখে আতঙ্কের রেশ৷ কিছুতেই সে ভুলতে পারছে না দুষ্টু অটোচালকের মাকে জোর করে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.