অর্ণব আইচ: ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে কালো হয়ে আসছিল মনিটর। কন্ট্রোল রুমের পুলিশ অফিসাররা বুঝতে পারছিলেন যে, বিকল হয়ে যাচ্ছে একের পর এক সিসিটিভি। কিন্তু ঝড় যে এত মারাত্মক কাণ্ড করবে, তা ভাবতে পারেননি তাঁরাও।
আমফানের তাণ্ডবে কলকাতায় নষ্ট ও বিকল হয়েছে প্রায় হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা। কোথাও লাইটপোস্টে লাগানো ক্যামেরা পড়ে গিয়ে ভেঙেছে। কোথাও বা ছিঁড়েছে তার। এমনই জানিয়েছে লালবাজার। সিসি ক্যামেরা নষ্ট হওয়ার কারণে যাতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য রাস্তায় টহলের উপর পুলিশ বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। শহরে নজরদারি বাড়ানোর জন্য পুলিশ ও বেসরকারি উদ্যোগে কয়েক হাজার সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বহু অপরাধের কিনারা হয়েছে সিসিটিভিতে। কেউ ট্রাফিক নিয়ম ভাঙলে, সেই তথ্য সিসিটিভিতে ধরা পড়ছে।
কিন্তু গত বুধবার সবই ওলটপালট করে দিল ঘূর্ণিঝড় আমফান। পুলিশ জানিয়েছে, প্রচণ্ড ঝড়ে বহু জায়গা থেকে উড়ে বেরিয়ে গিয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। আবার অনেক জায়গায় ল্যাম্পপোস্ট অথবা ট্রাফিক লাইটপোস্টের সঙ্গে লাগানো ছিল সিসি ক্যামেরা। সেই পোস্ট পড়ে গিয়ে ভেঙে গিয়েছে ক্যামেরাও। বহু জায়গায় গাছ পড়ে ক্যামেরা ভেঙে গিয়েছে। আবার গাছ পড়ার কারণে ছিঁড়ে গিয়েছে কেবল ও তার। ফলে সিসিটিভি অকেজো হয়ে রয়েছে।
লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কত সিসিটিভি নষ্ট ও বিকল হয়েছে, তা সম্পূর্ণ হিসেব করা যায়নি। কিন্তু প্রাথমিকভাবে বোঝা গিয়েছে যে, ভেঙে গিয়েছে অথবা অকেজো হয়েছে শহরে অন্তত হাজারটি সিসি ক্যামেরা। এর মধ্যে একটি অংশ যেমন লাগিয়েছিল ট্রাফিক বিভাগ, তেমনই থানার পক্ষ থেকেও লাগানো হয়েছিল বহু ক্যামেরা। লকডাউন শুরু হওয়ার পর কনটেনমেন্ট এরিয়ায় লোকজন বের হচ্ছে কি না সেদিকে নজর রাখতে সম্প্রতি কয়েকশো ক্যামেরা লাগানো হয়। আবার বেসরকারি উদ্যোগেও লাগানো হয় সিসি ক্যামেরা। এ ছাড়াও স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির বেপরোয়া গতির উপর নজরদারির জন্য বসানো বেশ কিছু ইনফ্রারেড ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
লালবাজারের এক আধিকারিক জানান, বাইপাস ও পূর্ব কলকাতার দিকে এবং ফ্লাইওভারের উপর বসানো ক্যামেরাগুলি বেশি নষ্ট হয়েছে। শিয়ালদহ ও বেলেঘাটা অঞ্চলেই প্রায় ৩০টি সিসি ক্যামেরা ঝড়ে নষ্ট হয়েছে। উত্তরের শ্যামবাজার থেকে দক্ষিণের রাসবিহারী মোড়, টালিগঞ্জ বা বেহালা, পুরো শহরজুড়েই এক দৃশ্য। রবীন্দ্র সরোবরেও প্রায় শখানেক সিসি ক্যামেরা নষ্ট হয়েছে বলে খবর। কেবল বা তার ছিঁড়ে সিসি ক্যামেরা নষ্ট হলে মেরামত করা সহজ। কিন্তু ভেঙে গেলে নতুন করেই ক্যামেরা বসাতে হবে। এতে সময়ও লাগবে। তবে এর জন্য অপরাধী বা ট্রাফিক আইনভঙ্গকারীরা যাতে মাথা চাড়া দিতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে শহরজুড়ে নাকা ও টহল আরও বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.