ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: দুই রোগেরই দাওয়াই মজুত। ওঝাও হাজির। কিন্তু ঠিক সময়ে রোগ ধরা পড়ছে না। মিলছে না পূর্ণাঙ্গ তথ্যও। ফলে একইসঙ্গে এডস ও যক্ষ্মার মারণ কামড়ে বেসামাল হতে পারে মহানগরের একাংশ, আশঙ্কা স্বাস্থ্য দপ্তরের।
গত দু’বছরের স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের মধ্যে একই ব্যক্তির এডস ও যক্ষ্মা দুই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ফলে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট স্বাস্থ্য কর্তাদের কপালে। একইসঙ্গে এই দুটি রোগের শিকার হয়েছেন হাজারের উপর। তবে বেসরকারি পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য দপ্তরের চৌকাঠ ডিঙিয়ে ঢুকতেই পারেনি। কেন এমন ঘটনা? রাজ্যের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের নোডাল অফিসার ডা. বরুণ সাঁতরা বলেছেন, “কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকলেও বেশকিছু বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে একইসঙ্গে এই দুটি রোগে আক্রান্ত রোগীর তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান স্পষ্ট নয়।” স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদের আশঙ্কা, সব তথ্য পেলে সংখ্যা আরও বাড়বে।
গত বছরের স্বাস্থ্যদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যে যক্ষ্মা চিহ্নিত হয়েছিল ১ লক্ষ ১০ হাজার ৫৪৬ জনের। এডস চিহ্নিত হয় প্রায় ৯৬ হাজার ৯৪৮ জনের। এরমধ্যে কলকাতার সংখ্যা ১,২৮৫। কলকাতার পরেই দ্বিতীয় স্থানে উত্তর চব্বিশ পরগনা। একইসঙ্গে দুই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০৬। এরপরেই যথাক্রমে হুগলি ও দার্জিলিং। রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ১০০এবং ৯৭। করোনা এবং লকডাউনের আবহে এ বছর তেমনভাবে সমীক্ষা হয়ে ওঠেনি। তবে স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যে একসঙ্গে এই দুটি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। এরমধ্যে কলকাতার সংখ্যা ৭০০-র বেশি। ডা. বরুণ সাঁতরার কথায়, “এডস রোগী খুব দ্রুত যক্ষ্মা সংক্রমিত হতে পারে। তাই সামান্য জ্বর-কাশি হলেই দ্রুত সরকারি যক্ষ্মা পরীক্ষা কেন্দ্র বা হাসপাতালে পরীক্ষা করতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক যক্ষ্মা এবং এডসকে ‘ভালনারেবল ডিজিজ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।”
ডিসেম্বর থেকে দ্রুত যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্র ও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর একযোগে রাজ্যের ১৯ টি ব্লকের রোগীদের মধ্যে মাস্ক, ফিনাইল, কফ বা থুতু ফেলার পিকদানি নিখরচায় দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। প্রথাগত চিকিৎসায় যাঁরা সুস্থ হচ্ছেন অর্থাৎ ‘ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ প্রথম পর্যায়ে তাঁদের এই প্রকল্পে আনা হবে। এরমধ্যে রয়েছে কোচবিহার, নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে এবার হাট-বাজার বা গ্রামসভায় প্রচার চালানো হবে। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এই কর্মসূচি রূপায়ণে প্রায় ৪০০-র বেশি ‘টিবি চ্যাম্পিয়ন’ নিয়োগ করেছে। আগে যক্ষ্মা রোগে ভুগছেন, কিন্তু এখন সুস্থ এমন ব্যক্তিদের কাজে যুক্ত করা হয়েছে। একদিন সচেতনতামূলক প্রচার করলেই একশো টাকা দেওয়া হবে। মাসে দুটি করে এমন প্রচারের কাজ চলবে। স্বাস্থ্যদপ্তর ইতিমধ্যে প্রচারের কাজে যুক্তদের একদফা প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.