অর্ণব আইচ: সিঁথি কাণ্ডে ফের চাঞ্চল্যকর মোড়। এবার আসুরার সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়ার অভিযোগে সরব তার দাদা এবং বোন। রবিবার নাইট শেল্টারে ব্যবসায়ীর মৃত্যুর একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী আসুরার সঙ্গে দেখা করতে যান তাঁরা। তবে পুলিশ বোনের সঙ্গে কথা বলতে না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ আসুরার পরিজনেরা। এদিকে, এই ঘটনায় এক ওসিকে জেরা করা হচ্ছে।
সপ্তাহখানেক আগে সিঁথি কাণ্ডের সূত্রপাত। চোরাই জিনিসপত্র বিক্রির অভিযোগে আসুরা বিবিকে আটক করে নিয়ে সিঁথি থানার পুলিশ। ওই মহিলা স্বীকার করে নেয় চোরাই জিনিসপত্র ব্যবসায়ী রাজকুমার সাউয়ের কাছে বিক্রি করেছেন। ওই বয়ানের ভিত্তিতেই পুলিশ ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই থানাতেই মারা যান ব্যবসায়ী। পুলিশের অত্যাচারে রাজকুমারের মৃত্যু হয়েছে বলেই দাবি করেন তাঁর ছেলেরা। এদিকে, থানা থেকে বেরনোর পর আসুরা দাবি করে, পুলিশের অত্যাচারেই রাজকুমারের বিরুদ্ধে বয়ান দিতে হয়েছে তাকে। মঙ্গলবার রাতেও আশ্রয়স্থলে পাওয়া যায় আসুরা। সেখান থেকে পুলিশ তাকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর আচমকাই ‘বেপাত্তা’ হয়ে যায় আসুরা।
তবে বৃহস্পতিবার রাতে ফিরে আসে অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলা। ফিরে এসে আবারও বয়ান বদল করে সে। আসুরা জানায়, ব্যবসায়ীর মৃত রাজকুমার সাউয়ের পরিবারের লোকেদের মারধরের হুমকির ভয়েই তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিলেন। এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ফিরে এসেই তিনি আক্ষরিক অর্থে মৃতের ছেলেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। মহিলার এই বক্তব্য ঘিরে নতুন করে রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করে। অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলার গোপন জবানবন্দি নিতে গত বৃহস্পতিবার শিয়ালদহ আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই সিঁথি থানায় যান। থানারই একটি ঘরে বিচারক প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আসুরা বিবির গোপন জবানবন্দি নেন। তারপরই আদালত সিঁথি থানার পুলিশকে নিহতের যুবকের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর নির্দেশ দেয়। প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার ফলেই মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিহতের পরিবারের দাবি, ঘটনা ধামাচাপা দিতেই এবার নিহতের পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করল পুলিশ।
এদিকে, কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় আপাতত নাইট শেল্টারেই দিন কাটছে আসুরার। রবিবার নাইট শেল্টারে ব্যবসায়ীর মৃত্যুর একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী আসুরার সঙ্গে দেখা করতে যান তাঁরা। অভিযোগ, ওই নাইট শেল্টার দায়িত্বে থাকা পুলিশরা তাঁদের আসুরার কাছে নিয়ে যান। তবে দু’জনকে তাঁদের বোনের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। আসুরার বোনের অভিযোগ, ঘটনার দিন থানায় আসুরার সামনে ওই ব্যবসায়ীকে মারধর করা হয়। তা দেখে কেঁদে ফেলে আসুরা। জোর করে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বয়ান নিতে অন্তঃসত্ত্বা আসুরাকেও বেধড়ক মারধর করে পুলিশ। ওই মহিলার দাদার দাবি, যদি সত্যি কোনও অপরাধ করে তাঁর বোন, তবে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হোক। এভাবে পুলিশি নিরাপত্তায় কেন রাখা হচ্ছে কেন? এদিকে, পুলিশের উপর আস্থা রাখতে না পেরে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তাভাবনা নিহত ব্যবসায়ীর পরিবারের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.