ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: তিনদিন অসহ্য ব্যথা সহ্য করে শুয়ে আছেন কেউ। অনেকে রবিবারের ডেলিভারি ডেট এগিয়ে এনেছেন শুক্রবারে। আবদার একটাই, ভাদ্রপদ কৃষ্ণ অষ্টমীতেই জন্ম দিতে হবে সন্তানকে!
ডেট ছিল শনিবার। যাদবপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ফুটফুটে তিন শিশুর জন্ম হয়েছে শুক্রবার। বেজায় খুশি সদ্য মা হওয়া তিন মহিলা। তাঁরা যে অপেক্ষা করে বসেছিলেন। চেয়েছিলেন জন্মাষ্টমীতেই সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে। ওই বেসরকারি হাসপাতাল একা নয়, শহরের একাধিক বেসরকারি, সরকারি হাসপাতালে এদিন দম ফেলার ফুরসত পাননি গাইনোকলজিস্টরা।
কৃষ্ণের জন্মদিনে সন্তানের জন্ম দেওয়া মা-বাবাদের একটাই কথা, “স্বয়ং কৃষ্ণ এসেছে কোল আলো করে।” ভাদ্রপদ কৃষ্ণ অষ্টমীতে সন্তানকে জন্ম দেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যাওয়ার এহেন ঘটনায় বিস্মিত নন চিকিৎসকরা। পিয়ারলেস হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজিস্ট ডা. শুভ্রজ্যোতি ভৌমিকের কথায়, মা-বাবার ইচ্ছেকে ফেলে দেওয়া যায় না। আর পাঁচটা পরিষেবার মতো চিকিৎসাও একটি পরিষেবা। শুভদিনে সন্তানকে পৃথিবীতে আনার এই ইচ্ছে আমাদের কাছে ‘ক্লায়েন্ট চয়েস।’ যদিও চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে মানুষের জীবন জড়িয়ে। ডা. ভৌমিকের কথায়, যদি প্রসূতি এবং সন্তানের কোনও বিপদ না থাকে সেক্ষেত্রে অভিভাবকদের আবদার মানতে কোনও সমস্যা নেই। তবে আমরা কখনওই সিজার ডেলিভারিতে উৎসাহিত করি না।
সাধারণত পিয়ারলেসে হাসপাতালে গড়ে ৫ থেকে ১০ টি শিশুর জন্ম হয় ফি দিন। এদিন তার চেয়ে কিছু বেশিই হয়েছে। বাদ যায়নি মেডিকা সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতালও। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, প্রতি বছরই এইদিন চাপ বেশি থাকে। সরকারি হাসপাতালেও চাপ কম ছিল না অষ্টমী তিথিতে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রুণা বল জানিয়েছেন, বিষয়টায় মা বাবার আবেগ জড়িয়ে। তারা ভাবেন সন্তানকে জন্মাষ্টমীর দিন পৃথিবীতে আনলে সে মস্ত বড় গুণি হবে। এর সঙ্গে বিজ্ঞানের সম্পর্ক নেই। ফি দিন গড়ে ১৫টা সিজার হয় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। এদিন সেখানে ১৮টি শিশুর জন্ম হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে সিজারকে উৎসাহিত করা হয় না।
সিজারের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছে স্বাস্থ্যদপ্তর। এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন, শুধু জন্মাষ্টমী নয়। বাংলা নববর্ষ, ইংরেজি নিউইয়ার নিয়েও অভিভাবকদের আবদার মারাত্মক। এই পঞ্জিকা মিলিয়ে শিশুর জন্ম বা অ্যাস্ট্রো সিজার নিয়ে চিন্তায় চিকিৎসকরা। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী প্রেগন্যান্সির চল্লিশ সপ্তাহে শিশুর জন্ম হওয়া স্বাভাবিক। ৩৮ সপ্তাহ পর্যন্ত চিকিৎসকরা তা মেনে নেন। বেশি হেরফের হলেই বিপদ। রাজ্যে এখন নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট অত্যন্ত আধুনিক। মা-বাবারা তাই ঝুঁকি নিতে চান। ডা. বিশ্বাস বলছেন, সময়ের আগে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তাঁর মস্তিষ্কের গঠন সম্পূর্ণ হয় না। দেরিতে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে মায়ের অ্যামনিওটিক ফ্লুইড শুকিয়ে যেতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.