Advertisement
Advertisement

Breaking News

আরসালান পারভেজ

খানদানের সম্মান রক্ষায় আত্মসমর্পণ আরসালানের, জাগুয়ার কাণ্ডে দাবি পরিবারের

জাগুয়ার দুর্ধটনা কাণ্ডের তদন্তে তার বন্ধু রাঘিবকে জেরা পুলিশের৷

Arsalan Parwez took the blame to save family's dignity
Published by: Sayani Sen
  • Posted:August 23, 2019 10:14 am
  • Updated:August 23, 2019 10:14 am  

অর্ণব আইচ: লাউডন স্ট্রিটে দুর্ঘটনার সময় রাঘিব পারভেজের জাগুয়ার গাড়িতে ছিল তার আরও এক বন্ধু। গত শুক্রবার রাতে একটি জন্মদিনের পার্টি থেকে ফেরার পথেই ঘণ্টায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে সে ধাক্কা দেয় মার্সিডিজ বেনজ গাড়িটিকে। সেই গাড়িশুদ্ধ ট্রাফিক কিয়স্কে ধাক্কা দিলে মৃত্যু হয় দুই বাংলাদেশির। দুর্ঘটনার পর সেই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়েই দৌড়ে পালায় রাঘিব। সিসিটিভির ফুটেজেও উঠেছে সেই দৃশ্য। বিদেশ থেকে পাস করে আসা সল্টলেকের বাসিন্দা ওই মেধাবী ছাত্রটি ব্যবসায়ীর পুত্র। বৃহস্পতিবার তাকে লালবাজারে ডেকে জেরা করা হয়। পুলিশ তাকে সাক্ষী করতে পারে।

[আরও পড়ুন: চিদম্বরমের গ্রেপ্তারিতে গর্জে উঠল মমতার কলম! লিখলেন নতুন কবিতা]

ব্যাঙ্কশাল আদালতে প্রথমে দুর্ঘটনার মূল অভিযুক্ত রাঘিব পারভেজ ও তার মামা মহম্মদ হামজাকে তোলা হয়। কিছুক্ষণ পর আদালতে তোলা হয় আরসালান পারভেজকে। পুলিশ হেফাজত শেষ হওয়ার আগেই তাকে তোলা হয়। রাঘিবকে বাঁচাতে তার পরিবার আরসালানকেই তুলে দিয়েছিল পুলিশের হাতে। দাদা রাঘিবের পরনে ছিল সাদা গেঞ্জি। ভাই আরসালানের পরনে কালো। গত শুক্রবার রাতে দু’জনের শেষ দেখা হয়েছিল। এদিন আদালতের কাঠগড়ায় বন্দি অবস্থায় দেখা হল দুই ভাইয়ের। যেহেতু ঘটনার রাতে আরসালান গাড়িতে যে ছিল না, সেই তথ্য পুলিশের কাছে চেপে গিয়েছিল, সেই কারণে তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২০১ ধারা রুজু করা হয়। ভাগ্নে রাঘিবকে পালানোয় সাহায্য করতে মামা হামজার বিরুদ্ধে রুজু হয় ২১২ ধারা। অভিযোগ, ১৩৩ এমভি অ্যাক্টে পুলিশের প্রশ্নের উত্তরে লিখিতভাবে হামজা জানায়, গাড়ি চালিয়েছিল আরসালান। জামিনযোগ্য হওয়ায় বিচারক দু’জনকেই শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন। এদিন আদালতে সরকারি আইনজীবী কয়েকটি রায়ের উল্লেখ করেন। রাঘিবের জামিনের জন্য কোনও আবেদন করেননি তার আইনজীবী। রাঘিবকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

Advertisement
Raghib-Parvez
রাঘিব পারভেজ

এদিন রাঘিবকে গাড়িতে তুলে লালবাজারে নিয়ে আসার সময় কয়েকজন আত্মীয় ও বন্ধু হঠাৎই স্লোগান দিয়ে ওঠে, “রাঘিবভাই শের হ্যায়।” আইনশৃঙ্খলার সমস্যা যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।

[আরও পড়ুন: জাগুয়ার দুর্ঘটনা কাণ্ডে দু’জনের জামিন, শর্তসাপেক্ষে মুক্ত আরসালান পারভেজ]

পুলিশ জানিয়েছে, গত শুক্রবার এজেসি বোস রোডের উপর একটি নামী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ছেলের জন্মদিনের পার্টিতে যায় রাঘিব। রাত দেড়টা নাগাদ পার্টি থেকে বেরনোর সময় ওই বন্ধু গাড়িতে তার পাশেই ছিল। তাকে সল্টলেকে বাড়িতে পৌঁছে দেবে বলে। কিন্তু বন্ধু তাকে মল্লিকবাজারে নামিয়ে দিতে বলে। এর মধ্যেই অন্য এক বন্ধু ফোন করে কিড স্ট্রিটে তার বাড়িতে আসতে বলে। একসঙ্গেই ওই বন্ধুকে সল্টলেকে পৌঁছে দেবে বলে। কিছুদূর এগোনোর পরই আবার সেই বন্ধু ফোন করে তাদের আসতে বারণ করে। ইলিয়ট রোড পর্যন্ত গিয়ে মা ফ্লাইওভার ধরার জন্য রফি আহমেদ কিদওয়াই রোড, পার্ক স্ট্রিট হয়ে লাউডন স্ট্রিটে আসার সময়ই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

আরসালানের পরিবারের এক ঘনিষ্ঠর দাবি, দুর্ঘটনার পরই পুলিশের চাপের কারণেই ‘খানদান বাঁচাতে’ এগিয়ে আসে ছোট ছেলে। নিজেই পুলিশের হাতে আত্মসমর্পণ করতে চায়। পুলিশের ধারণা, ব্যবসা বাঁচাতেই বাড়ির বড় ছেলে রাঘিব পারভেজকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে সেই জায়গায় ছোট ছেলে আরসালানকে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করানো হয়। অবশ্য এই বিষয়টি যাচাই করছে পুলিশ। আইনজীবীদের পরামর্শে পরিবার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে ধারণা পুলিশের। প্রয়োজনে পরিবারের অন্য কারও বিরুদ্ধেও নেওয়া হতে পারে আইনি ব্যবস্থা। ওই আত্মীয় জানান, শুক্রবার গভীর রাতে দুর্ঘটনার পর রাঘিবের মামা মহম্মদ হামজা পরিবারের কাউকে না জানিয়ে তাকে শনিবারই তড়িঘড়ি বিমানে দুবাইয়ে পাঠিয়ে দেয়। পরে দুবাই থেকে রাঘিব ফোন করে বিষয়টি বাবাকে জানায়।

[আরও পড়ুন: কাল হল প্রযুক্তি, গাড়িই চিনিয়ে দিল কলকাতায় জাগুয়ার কাণ্ডের খলনায়ককে]

আরসালান যে নির্দোষ, সেই প্রমাণ পাওয়ামাত্রই পুলিশ পরিবারকে বলে আসল দোষীকে তাদের হাতে তুলে দিতে। প্রথমে রাঘিবের বদলে বাড়ির এক গাড়ির চালককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশ তাতে রাজি হয়নি। এদিকে, দুবাই থেকে আসতে নারাজ রাঘিবও। তখন বড় ছেলেকে ফোন করে বাবা আখতার পারভেজ বলেন, সে না এলে তিনি নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। এর পর বাড়ির চাপে গত সোমবার সে কলকাতায় ফিরে আসে। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে কিছু জানানো হয়নি। মঙ্গলবার গভীর রাতে পরিবারের এক সদস্য এক পুলিশকর্তাকে জানান, রাঘিব ফিরে এলেও অসুস্থ বলে বেনিয়াপুকুরের নার্সিংহোমে ভরতি রয়েছে। পরিবারের লোকেরা চান, অন্তত আরও দিনদুয়েক সে নার্সিংহোমে ভরতি থাকুক। তার পরই তাকে তুলে দেওয়া হবে পুলিশের হাতে। যদিও পরিবারের সেই অনুরোধে কান না দিয়ে পুলিশ নার্সিংহোমের চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলেন। পরিবারকে বলা হয়, অসুস্থ হলে পুলিশই চিকিৎসা করাবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement