অর্ণব আইচ: মালদহ (Maldah) থেকে ধৃত চিনা ‘চর’কে জেরায় আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এল তদন্তকারীদের। রাজ্য পুলিশের এসটিএফ সূত্রে খবর, হান জুনেইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের (Defence ministry) বিভিন্ন সাইটে হ্যাকিংয়ের ষড়যন্ত্র ছিল চিনা হ্যাকারদের। তাদের নিশানায় ছিল আলফা ডিজাইন নামে একটি সংস্থা, যার মাধ্যমে প্রতিরক্ষার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকার। বেঙ্গালুরুতে এই সংস্থার অফিস রয়েছে। সেখানকার ওয়েবসাইট হ্যাক করার ছক কষা হয়েছিল। এমনই জানতে পেরেছেন STF’এর গোয়েন্দারা। অর্থাৎ সাইবার হানা চালিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের গোপনীয়তা নষ্ট করার মতো পরিকল্পনা ছিল চিনা হ্যাকার বাহিনীর। এর সঙ্গে হানের কী যোগ, সেটাই এই মুহূর্তে জানতে মরিয়া তদন্তকারীরা।
সপ্তাহ দুই আগে মালদহের কাছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময়ে বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে হান জুনেই। তারপর তাকে কালিয়াচক থানার মাধ্যমমে রাজ্য পুলিশের এসটিএফের (STF) হাতে তুলে দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে মালদহ থেকে কলকাতায় নিয়ে এসে জেরা শুরু করেন তদন্তকারীরা। তাতেই উঠে এসেছে একাধিক তথ্য, যা দেখেশুনে চিন্তার ভাঁজ দুঁদে গোয়েন্দাদের কপালেও। যেভাবে ভারতের সুরক্ষায় সাইবার হানা চালানোর ছক ছিল তাদের। হানকে জেরা করে সেসবই জানতে চাইছে এসটিএফ। তাঁদের ধারণা, বড় কোনও সাইবার জালিয়াত চক্র সক্রিয় হানের পিছনে।
কীভাবে বাংলাদেশ থেকে হান ভারতে প্রবেশ করল? তা জানতে গিয়ে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য হাতে এল এসটিএফ গোয়েন্দাদের। জানা গিয়েছে, চাপাইনবাবগঞ্জে নৌকার মাঝির কথা ভালভাবে বুঝতে পারেনি সে। আর তার ফলেই দিকের ভুল। চোরাপথে সীমান্ত পার হওয়ার পর হানের যাওয়ার কথা ছিল একদিকে। ডান আর বাঁ দিক বুঝতে না পেরে অন্যদিকে চলে গিয়েছিল চিনা নাগরিক হান জুনেই। তাতেই সে ধরা পড়ে যায় বিএসএফের হাতে। যে নৌকা করে সে নদী পার হয়েছে, সেই মাঝি তাকে নিজের মতো করে ইংরেজিতে বোঝাতে শুরু করেন, কোন দিক দিয়ে গেলে হান সহজে বিএসএফের চোখ এড়িয়ে কালিয়াচকের রাস্তায় পৌঁছতে পারবে। তাতেই হয় গোলমাল। মাঝি যেদিক দিয়ে হানকে যেতে বলেছিল, তার প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে রয়েছে বিএসএফের একটি ক্যাম্প। সেদিক দিয়ে গেলে তার ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম ছিল। কিন্তু বোঝার ভুলে হান উল্টোদিকের রাস্তা নেয়। যেদিক দিয়ে সে যেতে শুরু করে, তার এক কিলোমিটারের মধ্যেই ছিলেন বিএসএফ জওয়ানরা। হাতেনাতে ধরা পড়ে হান।
এদিকে, চিনা জালিয়াতদের সঙ্গে মাওবাদীদের যোগও খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। মাওবাদীদের তহবিল জোগাতে হান জুনেই বা তাদের সঙ্গীরা কোনও সাহায্য করেছিল কি না, সেই বিষয়টিও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। সে জিপিএসের সাহায্যেও দিক নির্ণয় করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতেও সফল হয়নি। যদিও পুলিশের মতে, তারই নেটওয়ার্কের কোনও এক সদস্য কালিয়াচকে তৈরি ছিল বাকি পথ দেখানোর জন্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.