অভিরূপ দাস: বেদম কাশি। থুতু ফেলতে গিয়ে বেসিনে পড়েছিল দু’ফোটা রক্ত। প্রথমটায় ভেবেছিলেন হয়তো গলা চিড়ে গিয়েছে। বাইপাসের ধারে অ্যাপোলো হাসপাতালে (Apollo Hospital) শারীরিক পরীক্ষার পর দেখা গেল ষাটোর্ধ্ব পরিমল বালার গলার ভিতরে পেল্লায় টিউমার। আয়তনে যা ৮০০ সেন্টিমিটার! থাইরয়েড গ্রন্থিতে যার উৎপত্তি। তবে তখনও আন্দাজ করা যায়নি এ টিউমারের শেকড় কত গভীরে।
ইএনটি (মাথা এবং গলা) বিশেষজ্ঞ অঙ্কো সার্জন শান্তুনু পাঁজা বলেন, সমুদ্রের মধ্যে ভাসতে থাকা ডুবোপাহাড়ের মতো ছিল এই টিউমারটা। থাইরয়েড গ্রন্থির নিচেই থাকে শ্বাসনালী। টিউমারটা ওপর থেকে দেখে সাধারণ মনে হয়েছিল। কিন্তু নিচ দিয়ে তা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, শ্বাসনালী চিড়ে মিউকাসকে আঘাত করেছিল। চিকিৎসা পরিভাষায় এধরণের টিউমারকে বলা হয় ‘প্যাপিলারি কারসিনোমা’। সঠিক সময় যা অস্ত্রোপচার না হলে রোগীর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। স্বাভাবিকভাবেই রোগীর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। উত্তর চব্বিশ পরগনার দূর্গানগরের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের পরিবার ভেবেছিলেন ভিনরাজ্যে যাবেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু করোনা আবহে তা সম্ভব হয়নি।
অবশেষে তিন বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে আসেন অ্যাপোলোয়। এমতাবস্থায় অতিরিক্ত টেনশন করাও বারণ। ডাঃ পাঁজা জানিয়েছেন, রোগীকে তাঁরা সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলেন। এমনিতেই রোগী আর পাঁচজনের মতো শ্বাস নিতে পারছিলেন না। তার মধ্যে দুঃশ্চিন্তা করা আরও মারাত্মক। পরিবারের লোকেরা পরিমলবাবুকে জানায়ওনি যে, তাঁর ক্যানসার হয়েছে। রোগী যাতে করোনা আক্রান্ত না হন সে বিষয়েও সতর্ক ছিলেন চিকিৎসকরা। তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচারের আয়োজন করা হয়। চার ঘণ্টার অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে বের করে আনা হয় টিউমারটিকে। কারসিনোজেনিক টিউমারটি পুরোপুরি নির্মূল করতে হলে শ্বাসনালীর অনেকটা অংশ বাদ দিতেই হত। ডাঃ পাঁজা জানিয়েছেন, প্রায় তিন সেন্টিমিটার শ্বাসনালী বাদ গিয়েছে প্রৌঢ়ের। গোটা টিউমারটি অপারেশন করে বাদ দিয়ে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড এবং শ্বাসনালীর একাংশ নতুন করে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।
জটিল এই অস্ত্রোপচারে প্যারাথাইরয়েড গ্ল্যান্ডে যাতে কোনও আঘাত না লাগে সেদিকে কড়া নজর ছিল। অস্ত্রোপচারের পর এখন সম্পূর্ণ সুস্থ পরিমল চন্দ্র বালা। তাঁর ছেলে প্রীতম বালার কথায়, “চিকিৎসকদের অসংখ্য ধন্যবাদ। করোনা আবহে আমরা ভেবেছিলাম বাবাকে বাঁচাতে পারব না। এবছর বাবার নতুন জন্ম হল।” অ্যাপোলো হাসপাতালের ইএনটি বিশেষজ্ঞ শান্তনু পাঁজা জানিয়েছেন, “অত্যন্ত জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার ছিল ঠিকই, কিন্তু দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলে এই বৃদ্ধকে বাঁচানো সম্ভব ছিল না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.