অভিরূপ দাস: একদিকে করোনা (Corona Virus) আক্রান্ত হয়ে ক্ষতবিক্ষত ফুসফুস। তার মধ্যে ভয়াবহ হার্ট অ্যাটাক। বাঁদিকের করোনারি আর্টারি কাজ করছে না। ভাইরাসের দাপটে জর্জরিত মাধব সাধুখাঁকে নতুন জীবন দিল অ্যাপোলো হাসপাতাল (Apollo Gleneagles Hospitals)।
মে মাসের শেষ রবিবার। কোভিড (COVID-19) সংক্রান্ত বিধি নিষেধ জারি। প্রচণ্ড বুকে ব্যথা নিয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালে আসেন মাধব সাধুখাঁ। চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন আদতে মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন। হৃৎপিণ্ডের মাঝে করোনারি আর্টারি নামে দু’টি ছোট ছোট ধমনী থাকে। এরাই হৃৎপিণ্ডকে সচল রাখতে সাহায্য করে বা হৃৎপিণ্ডকে পুষ্টির জোগান দেয়। কোনও কারণে মাধববাবুর করোনারি আর্টারি ব্লক হয়ে গিয়েছে। যে এলাকায় ওই আর্টারি বা ধমনী রক্তের পুষ্টি পৌঁছে দেয় সে জায়গার হৃৎযন্ত্রের পেশিগুলি কাজ করছে না। তার ফলেই মারাত্মক হার্ট অ্যাটাক হয়।
এমতাবস্থায় রক্ত জমাট বাঁধলে থ্রম্বোলিসিস বা ফিবরিনোলাইটিক থেরাপি দেওয়া হয়। কিন্তু সে থেরাপি দেওয়ার পরেও রোগীর বুকে ব্যথা কমছিল না। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তৈরি হয় তিন সদস্যের মেডিক্যাল টিম। যে টিমে ছিলেন চিকিৎসক শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ডা. শঙ্খ শুভ্র দাস, ডা. উদয় শংকর দাস। চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন দ্রুত অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে হৃদয়ের বন্ধ আর্টারি খুলতে হবে। সেই মতো PPE পরে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হয়। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। দেখা যায় সম্পূর্ণ হার্ট ব্লক হয়ে গিয়েছে।
মাধববাবুর টেম্পোরারি পেসিং পদ্ধতিতে হার্টের মধ্যে তার ঢুকিয়ে ব্লক খোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারপরই শুরু হয় খিঁচুনি। রোগীকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান করেও অসুখ ধরতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা। কোভিড ICU-তে টানা ১০ দিন কাটিয়ে আপাতত সুস্থ মাধববাবু। ডা. শঙ্খ শুভ্র দাস জানিয়েছেন, একদিকে করোনা রোগী, তার উপর হৃদরোগে আক্রান্ত। একে বাঁচানোই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। চিকিৎসকদের ধারণা, কোভিডের কারণেই হৃৎপিণ্ডে সমস্যা দেখা গিয়েছিল মাধববাবুর।
ডা. শঙ্খশুভ্র দাসের কথায়, অনেকেই ভাবছেন করোনা ভাইরাস শুধু ফুসফুসের অসুখ। কিন্তু ফুসফুসের মতো হৃৎপিণ্ডেও অ্যাঞ্জিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম বা এসিই-২ রিসেপটর রয়েছে। করোনার স্পাইকপ্রোটিন যাকে আঁকড়ে ধরছে। চিকিৎসকদের ধারণা এভাবেই মানববাবুর অঙ্গের কোষে ঢুকে পড়েছিল কোভিড। কোষগুলিকে আটকে ধরে শেষ করে দিয়েছিল তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম। তাতেই হার্ট অ্যটাক হয় তাঁর। এছাড়াও চিকিৎসকদের ধারণা, মানববাবুর শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অতি সক্রিয়তা বা হাইপার ইনফ্ল্যামেশনের জন্যও হৃৎপেশির ক্ষতি হয়েছিল। অতিরিক্ত সাইটোকাইন নিঃসরণের ফলে ফাইব্রিন প্রোটিন ও মৃত কোষ সংযোগে ক্লট তৈরি করেছিল। আর তাতেই রক্তপ্রবাহ জমাট বেঁধেছিল হৃৎপিণ্ডে। সেই জটিলতা থেকে এখন মুক্ত মাধববাবু। চিকিৎসকদের তৎপরতাতেই নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.