সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গোটা দেশজুড়ে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বন্ধের দাবিতে এবং ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বার্তার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবারই বিশিষ্ট পরিচালক শ্যাম বেনেগাল, অপর্ণা সেন, অনুরাগ কাশ্যপ থেকে মণিরত্নম-সহ সরব হয়েছিলেন ৪৯ বিদ্বজ্জন৷ ‘জয় শ্রীরাম’ থেকে গণপিটুনি, যাবতীয় অসহিষ্ণুতামূলক বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁরা। দেশের এই অস্থির পরিস্থিতিতে প্রত্যেকের কপালেই পড়েছে ভাঁজ। গোটা দেশ রীতিমতো তোলপাড়৷ যার জন্য শাসক দলের ক্ষোভের মুখেও পড়েছেন তাঁরা। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর সমর্থনে পালটা চিঠি দিয়েছেন ৬১ জনের এক বিশিষ্ট দল। যেই তালিকায় নাম রয়েছে কঙ্গনা রানাউত, প্রসূন জোশীদের মতো ব্যক্তিত্বদের। এবার কঙ্গনা-প্রসূন-সহ বাকি মোদিপন্থীদের ওই পালটা চিঠির মোক্ষম জবাব দিলেন অপর্ণা সেন এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
[আরও পড়ুন: মদ্যপ অবস্থায় বান্ধবীকে মারধরের অভিযোগ, পলাতক অভিনেতা লোকেশ ঘোষ]
দু’- দুটো প্রাণনাশের হুমকি চলে এল? এত ভয়! তার মানে কোথাও গিয়ে ওদের আঁতে ঘা লেগেছে নিশ্চয়।”
মোদিপন্থী বিদ্বজ্জনরা তাঁদের চিঠিতে অনুরাগ-অপর্ণা-শ্যাম বেনেগালদের রীতিমতো তুলোধনা করেছেন। তবে ক্ষান্ত থাকেননি অপর্ণাও। তিনিও একহাত নিয়েছেন মোদীপন্থীদের। ওই ৬১ জনের চিঠি প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন পরিচালক অপর্ণা সেনও। ঠিক কী বললেন অভিনেত্রী তথা পরিচালক? অপর্ণার কথায়, “ইতিমধ্যেই কৌশিক সেনকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। হুমকি পেয়েছেন অনুরাগ কাশ্যপও। হাসি পাচ্ছে আমার। মাত্র ৪৯ জন লোক চিঠি দিল, আর তাতেই দু’- দুটো প্রাণনাশের হুমকি চলে এল? এত ভয়! তার মানে কোথাও গিয়ে ওদের আঁতে ঘা লেগেছে নিশ্চয়।” অন্যদিকে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার বক্তব্য আমি স্পষ্ট চিঠিতে উল্লেখ করেছি। তাতে কার আপত্তি থাকল, কে কী বলল, আমার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। তাঁরা আগে নিজেদের ঘর সামলাক।” ঋদ্ধি সেন বলেন, “ওরা ভয় পেয়েছে, বিষয়টিকে এত বড় করে দেখার কিছু নেই।”
“তার পালটা হিসেবে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেই চিঠিটি গিয়েছে, তা পুরোপুরি রাজনৈতিক স্বার্থে।”
শুধু বিনোদুনিয়াই নয়, সরব হয়েছেন বিশিষ্ট কবি শঙ্খ ঘোষও। তাঁর কথায়, “দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে শুভচিন্তাসম্পন্ন মানুষজন চিঠিটা দিয়েছিলেন, সেটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। তবে তার পালটা হিসেবে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে চিঠি গিয়েছে, তা পুরোপুরি রাজনৈতিক স্বার্থে। প্রথম চিঠিতে বাংলার যাঁরা সই করেছিলেন, তাঁরা তো শুধু পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা নিয়ে কথা বলেননি। তাঁরা গোটা দেশে ঘটে চলা অনাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।”
[আরও পড়ুন: ক্ষমা চাইতে হবে আজম খানকে, একযোগে সরব মিমি-নূুসরত-সহ মহিলা সাংসদরা]
‘ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা’ নিয়ে পাঠানো চিঠির পালটা দিতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থনে শুক্রবার চিঠি পেশ করেছিলেন সরকারপন্থী ৬২ জন বিদ্বজ্জন৷ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন অভিনেত্রী পার্নো মিত্র, কাঞ্চনা মৈত্র, পরিচালক মিলন ভৌমিক, অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, পরিচালক মধুর ভাণ্ডারকর, বিবেক অগ্নিহোত্রী, লেখক ও গীতিকার প্রসূন যোশী, নৃত্যশিল্পী সোনাল মানসিং, পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভট্টর-মতো ৬১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। চিঠিতে তাঁরা সাফ জানিয়েছেন, “দেশের একতা ও সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার জন্যই এই ধরনের চিঠি লিখেছেন দেশের কয়েকজন ‘স্বঘোষিত অভিভাবক’৷ আন্তর্জাতিক মহলে সরকারের ভাবমূর্তি খারাপ করার উদ্দেশে দেশের বিশিষ্টদের একাংশ কাজ করছেন।” ওই সেই একই চিঠিতে দেশের কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে তাঁরা লিখেছেন, ‘‘মাওবাদী হামলায় যখন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, সিআরপিএফ জওয়ানদের প্রাণ গিয়েছে, তখন বিদ্বজ্জনরা চুপ থেকেছেন৷ সন্ত্রাসবাদী হানায় কাশ্মীরে যখন রক্ত ঝড়ছে, তখন তাঁরা মুখ খোলেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন দেশবিরোধী স্লোগান উঠেছে তখনও তাঁদের বলতে শোনা যায়নি৷’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.