সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে রাজ্যে ক্রমেই চড়ছে পারদ। রাজনীতির রণাঙ্গনে অশ্বমেধের ঘোড়া ছোটাতে তৈরি শাসক-বিরোধী উভয়পক্ষই। এহেন পরিস্থিতিতে, অর্থনীতির দাঁড়িপাল্লায় সোমবার মমতা সরকারকে কার্যত তুলোধোনা করলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর।
সোমবার শহর কলকাতায় ‘ইকোনোমিক রিসার্জেনস অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল– রোড অ্যাহেড’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন অর্থ ও বাণিজ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। বিজেপি নেতা মুকুল রায়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ও সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত-সহ অন্য নেতাদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। রাজ্যের অর্থনীতি নিয়ে এই আলোচনা সভায় শুরু থেকেই মমতা সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক মেজাজে দেখা যায় গেরুয়া শিবিরের প্রতিনিধিদের। সেই সুরেই সুর মিলিয়ে অনুরাগ ঠাকুর বলেন, “বাংলার এই জমিতেই জন্ম নিয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। হিন্দু ধর্মে মহিলাদের পুনর্বিবাহ নিয়ে সরব হন তিনি। আমি যে রাজ্যের কথা বলছি তা স্বামী বিবেকানন্দের রাজ্য, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর রাজ্য। এটা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের রাজ্য। কাশ্মীরে গিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন শ্যামাপ্রসাদ। কাশ্মীরেও আমরা পদ্ম ফুটিয়েছি। কলকাতায় নামতে আমাকে জিজ্ঞেস করা হল, এই রাজ্যে বহিরাগতের কী কাজ। দেশের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যদি বহিরাগত হয়, তবে কি অনুপ্রবেশকারীরা আপনাদের লোক? রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা নেই, তাই বিনিয়োগ করতে লোকে ভয় পায়। আপনি কি বিনিয়োগকারীদেরও বহিরাগত বলবেন? আজ দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে, তার কারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রী মোদিজিকে বিশ্বাস করে। তাই করোনা কালেও বিনিয়োগ হয়েছে। ইউপিএ আমলের চাইতে অনেক বেশি টাকা বাংলাকে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার।”
শুধু এতেই ক্ষান্ত থাকেননি অনুরাগ। তিনি আরও বলেন, “মমতার রাজ্যে হত্যা, অপরাধের মতো শিল্প বেড়ে উঠেছে। নারদ, রোজভ্যালি, সারদার মতো কেলেঙ্কারি হয়েছে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ৩ কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। এখন কি ক্রেতারা সবাই পালিয়ে গিয়েছেন? কেন্দ্রের প্রকল্প বলবৎ করতে বাধা দেন মমতা। মতানৈক্য হতে পারে, কিন্তু তার জন্য পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের ক্ষতি করার অধিকার তাঁকে কে দিয়েছে? শিক্ষা, স্বাস্থ্যর মতো ক্ষেত্রে বাংলার অবস্থা শোচনীয়। আজ উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলা অনেকটা ভাল হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের আমলে মেয়েরা বিনা ভয়ে চলাফেরা করছে। কিন্তু আজ পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। সোনার বাংলা গড়তে হলে মোদি সরকার চাই। দিল্লি ও কলকাতা দুই জায়গায় মোদি সরকার এলেই সোনার বাংলার স্বপ্ন পূর্ণ হবে।”
এদিনের সভায় অনুরাগের আগে নিজেদের বক্তব্যে মমতা সরকারকে রীতিমতো তুলোধোনা করেন বিজেপি নেতারা। সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের কথার রেশ ধরে মুকুল রায় বলেন, “অর্থনীতি আমি খুব একটা বুঝি না। আমি অর্থনীতির ছাত্রও নই। কিন্তু বাংলা যে পিছিয়ে পড়ছে, তা বোঝার মতো বুদ্ধি আমার রয়েছে। বাম জমানার অবসানের পর আজ রাজ্যের দেনা ৫ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। এই ক’বছরে বাংলা কী পেল, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক রাজ্য সরকার। একটি ছেলেকেও চাকরি দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” ওই সভায় বাবুল সুপ্রিয় বলেন, “অর্থনীতির নিরিখে বংলার অবস্থা হচ্ছে কড়াই থেকে আগুনে পড়ে যাওয়ার মতো। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমাকে একটা ছবি দেখান যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও বড় শিল্প বা কারখানার উদ্বোধন করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমি অধিগ্রহণ আইনের জন্য শিল্পপতিরা এরাজ্যে আসতে চাইছেন না। এছাড়া, সিন্ডিকেট, কাটমানির মতো বিযয়গুলি রয়েছে। বামেদের আমলেই রাজ্যে শিল্প ও পরিকাঠামোর পতন শুরু হয়। তৃণমূলের আমলে তা বেড়েছে। কয়লা পাচারের মতো অপরাধও লাগাতার ঘটছে।” সব মিলিয়ে আসন্ন নির্বাচনের আগে শাসক শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে গেরুয়া শিবির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.