ছবি: প্রতীকী।
সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: একদিকে রশিদ আলম ওরফে গব্বর। অন্যদিকে রমেশ মাহাত। একজন কলকাতার অপরাধ জগতের অতি পরিচিত নাম। দ্বিতীয়জন বালি থেকে শুরু করে ভদ্রেশ্বর পর্যন্ত অন্ধকার জগতের ত্রাস। অপরাধ জগতে দু’জনেই ছিল দুই মেরুর। কিন্তু আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে এসে গব্বর ও রমেশ নিজেদের অপরাধ জগতের নতুন মেলবন্ধন ঘটাল। মিলে গেল তাদের চারহাত। এরপর হাতে হাত মিলিয়ে, জেলে বসেই তারা পাঁচ লক্ষ টাকা চেয়ে ফোনে হুমকি দিল উত্তর কলকাতার প্রমোটার চেতন সিংকে। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে চেতন সিং দ্বারস্থ হলেন লালবাজারের। তাঁর অভিযোগ পেয়ে জেলবন্দি গব্বর ও রমেশ মাহাতর বিরুদ্ধে তদন্তে নামলেন কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফের গোয়েন্দারা।
[ছকভাঙা সম্প্রীতি মিছিল বামেদের, সামনের সারিতে ছাত্র ও যুবনেতারা]
নয়ের দশকের মাঝামাঝি। পার্ক স্ট্রিটের কুখ্যাত তোলাবাজ আখতার ভাইদের হাত ধরে শহরের অপরাধ জগতে সবেমাত্র পা দিয়েছে তালতলার উমা দাস লেনের গব্বর। এরপর গব্বর নিজেই শহরে একটি আলাদা করে অপরাধের গ্যাং তৈরি করে ফেলে। একের পর এক তোলাবাজি, অপহরণ ও খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে সে। এমনকী, পুলিশকে বোমা মারার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শহরের বিভিন্ন থানায় একাধিক অপরাধমূলক মামলা রয়েছে গব্বরের নামে। লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৩-এ গব্বরের যাবজ্জীবন সাজা হয়। শহরের ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে ত্রাস হয়ে উঠেছিল গব্বর। সে এখন আলিপুর জেলে বন্দি।অন্যদিকে, হাওড়া ছাড়া হুগলিরও অন্ধকার জগতের সম্রাট হয়ে উঠেছিল বালির কুখ্যাত তোলাবাজ রমেশ মাহাত। বালি থেকে শুরু করে রিষড়া, শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, বৈদ্যবাটি, ভদ্রেশ্বর এমনকী ব্যান্ডেল পর্যন্ত ছিল তার তোলাবাজি জগতের সাম্রাজ্য। গব্বরের মতো রমেশও একের পর এক তোলাবাজি, খুন ও অপহরণের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলি শিল্পাঞ্চলে রমেশ কমপক্ষে ২০টি খুনের মামলায় জড়িত। কয়েকবছর আগে রহস্যজনকভাবে খুন হয় রমেশের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হুব্বা শ্যামল। সেই খুনের পিছনেও রমেশের যোগ ছিল বলে পুলিশের অনুমান। বহু চেষ্টায় রমেশকে কয়েকবছর আগে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। বন্দি ছিল হাওড়া জেলে। কিন্তু সেই জেলে বসেও রমেশ তার তোলাবাজির সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছিল বলে পুলিশ জানতে পারে। এরপরই তাকে হাওড়া জেল থেকে আলিপুর জেলে সরিয়ে দেওয়া হয়।
[কেষ্টপুরে ভেজাল তেলের কারখানার হদিশ, গ্রেপ্তার ১]
কিন্তু আলিপুর জেলে এসেও তোলাবাজির যৌথ সাম্রাজ্য তৈরি করে ফেলে গব্বর ও রমেশ। নিজের বাড়ির কাছেই একটি পুরনো বাড়ি ভেঙে বহুতল নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল বড়তলার দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটের প্রমোটার চেতন সিং। বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। সেই ফোনে জানানো হয়, “আমি গব্বর বলছি। গোটা শহরে আমার ছেলেরা ছড়িয়ে রয়েছে। বিল্ডিং করছেন ভাল। তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে এর জন্য আমাদের পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হবে। আমার ছেলেরা পৌঁছে যাবে আপনার কাছে।” প্রথমে বিষয়টিতে অত গুরুত্ব দেননি চেতন। তিনি ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা করেন বন্ধুদের সঙ্গে। এরপর জানতে পারেন গব্বরকে। ততক্ষণে আরও কয়েকবার ওই নম্বর থেকে ফোন আসে তাঁর কাছে। শেষ ফোন ধরতেই এবার জানানো হয়, “আমি রমেশ মাহাত বলছি। গব্বর যে কথা আপনাকে বলেছে তা পালন করুন। নয়তো আপনারই ক্ষতি।” এই ফোন পেয়ে আর বিন্দুমাত্র অপেক্ষা করার সাহস দেখাননি চেতন। সঙ্গে সঙ্গে বড়তলা থানায় গিয়ে এই বিষয়ে অভিযোগ জানান। ঘটনাটি জানান লালবাজারের পুলিশ কর্তাদেরও। এরপরেই ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করে এসটিএফ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.