দীপালি সেন: মহানগর থেকে বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (Jadavpur University) নিয়ে কত স্বপ্নই তো থাকে মফস্বলের পড়ুয়াদের। মেধার জোরে লড়াই করে অনেক প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সেখানে পড়ার সুযোগ পান অনেকে। কিন্তু স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে বেরনো কি অতই সহজ? তার জন্যও তো অনেক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আর সেই সংগ্রাম যদি পড়াশোনা বাদ দিয়ে অন্য কারণে করতে হয়, তাহলে মনের জোর আর কতদিনই বা থাকে? ঠিক যেমনটা হয়েছে যাদবপুরের ছাত্র অর্পণ মাজির। বুধবার রাতে হস্টেলের তিনতলা থেকে পড়ে গিয়ে বাংলা প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যু (Death) হয়েছে। আর সহপাঠীর এই মর্মান্তিক পরিণতিতেই শেষ অর্পণের সমস্ত রোমান্টিসিজম! তিনিও এবার হস্টেল (Hostel) ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর তার আগে সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদমাধ্যমের সামনে বিস্ফোরক সমস্ত অভিযোগ জানিয়ে।
ফেসবুক পোস্টে (Facebook Post) অর্পণ লিখেছেন, ”যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে সব থেকে গণতান্ত্রিক লড়াকু একটি বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে প্রতিটি ছাত্রছাত্রী অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানে, এরাই পথ দেখায়। কিন্তু সমাজের যে ক্ষমতা কাঠামো, সংখ্যাগুরু ধর্মের সংখ্যালঘু দের উপর। পুরুষদের মহিলাদের উপর, আমাদের দেশের উঁচু জাতের নিচু জাতের প্রতি। ক্ষমতাবান সিনিয়রদের (ইউনিয়ন লিডারদের মদতপুষ্ট) জুনিয়রদের প্রতি।” এসবের টানেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা অর্পণের। কিন্তু দূর থেকে একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি ইমেজ আর সেখানে থেকে প্রতি মুহূর্তে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় – দুয়ের মধ্যে বাস্তবিক ফারাক অনেকটা। সেই বাস্তবেরই মুখোমুখি হয়ে অর্পণের সমস্ত স্বপ্নই ভেঙেছে বলে জানালেন আসানসোল (Asansol)থেকে পড়তে আসা ছাত্র।
সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সিনিয়রদের বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ের (Ragging)সমস্ত অভিযোগ প্রকাশ্যেই শোনালেন অর্পণ। মাথায় একেবারে ছোট ছোট ছাঁট করে চুল কাটতে বলা, সন্ধে ৬ টার মধ্যে হস্টেলে ঢোকার নিদান, সিনিয়রদের ক্রমাগত ফাইফরমাশ খাটা, সারারাত জাগিয়ে রেখে ইন্ট্রো নেওয়া – এমনই সব চলতে থাকত বলে অভিযোগ তাঁর। জিওলজি (Geology) নিয়ে পড়াশোনা করতে এসে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে, ভাবতেও পারেনি। আর সহপাঠী স্বপ্নদীপের মৃত্যুই সমস্ত রোমান্টিসিজম ছিন্ন করে দিয়েছে। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই অর্পণ বুঝতে পেরেছেন, এতে তাঁর কেরিয়ারের ক্ষতি হবে। আর তাই হস্টেল ছাড়ার সিদ্ধান্ত।
দিন তিন-চারেক আগেই ক্লাস শুরু হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটির (Anti Ragging Committee) তরফে নতুন করে কোনও পোস্টার কিংবা যোগাযোগের নম্বর ক্যাম্পাসে দেওয়া হয়নি এতদিন। প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের নিয়ে এতটাই উদাসীন ছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর হুঁশ ফিরেছে। বৃহস্পতিবার থেকে এসব কাজ শুরু হয়েছে। এবার র্যাগিং নিয়ে অনেকেই নির্দিষ্ট জায়গায় অভিযোগ জানাতে পারবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.