সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রথমবার নয়, তাই পয়লা বর্ষপূর্তিও নয়। কিন্তু তবু কোথাও তো প্রথম। কীসে প্রথম? উত্তরের ব্যাপ্তি বাড়ালে জনপরিষেবায় প্রথম, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে। সেদিকে নজর দেওয়া হোক পরে। আগে বরং উদযাপনের কথা ভাবা যাক। নবান্নে হ্যাটট্রিক অর্থাৎ রাজ্যে তৃতীয় তৃণমূল (TMC) সরকার প্রতিষ্ঠার এবার প্রথম বর্ষপূর্তি। ২০২১ সালের এই দিনই রাজ্যবাসীর বিপুল জনমত নিয়ে নবান্নের মসনদে বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরও উল্লেখ্যযোগ্য, কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের যাবতীয় প্রচেষ্টা, প্রবল গেরুয়া হাওয়ার দাপট সামলে নবান্নের নীল-সাদা আরও উজ্জ্বল। ২ মে তাই উদযাপনের দিন। সেইসঙ্গে পিছনে ফেলে আসা সাফল্যের চড়াই-উতরাই পথের দিকে ঘুরে তাকানোরও দিন। এ নিয়ে টুইট করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ‘দেশের কর্তাব্যক্তিদের আস্ফালনের বিরুদ্ধে’ জনরায় দেওয়া ‘অদম্য সাহসী মা-মাটি-মানুষ’কে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
গতবছর এই দিনে দেশের কর্তাব্যক্তিদের আস্ফালনের বিরুদ্ধে বাংলার মা- মাটি- মানুষ তাঁদের অদম্য সাহসের পরিচয় রেখেছিলেন। সেজন্য আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।( ১/৩)
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) May 2, 2022
‘অব কি বার/ ২০০ পার’, ‘TMC সরকার কো উখাড়কে ফেক দো’ – মোদি-শাহ-যোগীদের হুঁশিয়ারি, হিন্দুত্ববাদী ভাষণ আর হাজারও প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরির মাঝে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের স্লোগান ছিল একটাই – ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’। আর বাংলার মানুষ সেই ‘মেয়েকেই’ বেছে নিয়েছেন তাঁদের শাসক নয়, সর্বময় অভিভাবক হিসেবে। একুশের ২ মে বঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ্যে আসে। তাতে দেখা যায়, ২৯৩ আসনের মধ্যে ২১৩ আসনেই ঘাসফুলের জয়জয়কার। দু’শো পেরনোর স্বপ্ন দেখানো গেরুয়া শিবিরের জয়রথ থমকেছে ৭৭-এ। তৃণমূলের এই সংখ্যক আসনে জয়লাভ একেবারে রেকর্ড।
তবে রেকর্ড আরও বাকি ছিল। বিজেপির (BJP) প্রার্থী হয়ে ভোটে জেতার পর মোহভঙ্গ হয়েছে মোট ৮ জন বিধায়কের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির পথ ধরে জনসেবার মন্ত্রে তাঁরা উজ্জীবিত হয়েছেন। ফলস্বরূপ, ফুল বদল করে তাঁরা নাম লিখিয়েছেন জোড়াফুল শিবিরে। এখানে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কাজ করতে চান, নতুন পতাকা হাতে নিয়ে এই ইচ্ছাই প্রকাশ করেছেন তাঁরা। এই তালিকার প্রথম সারিতে রয়েছেন কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়, রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। এভাবে একে একে আট। অঙ্কের হিসেবে দাঁড়ায় এই মুহূর্তে শাসকদলের বিধায়ক সংখ্যা ২২১। আর বিজেপির শক্তি কমে ৬৯ জন বিধায়ক।
এ তো গেল জনপ্রতিনিধিদের পাল্লা ভারী হওয়ার হিসেবনিকেশ। কিন্তু জননেত্রীর দল তো স্রেফ বিধায়ক, সাংসদ নির্ভর নয়। তিনি কাজ করেন জনতাকে নিয়ে। তাই সেই জনতা জনার্দনের সমর্থন তাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি কাম্য। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেই নাগরিক পরিষেবায় জোর দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একে একে কন্যাশ্রী, সবুজশ্রী, শিক্ষাশ্রী, সবুজসাথী, খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথীর মতো জনকল্যাণমূলক প্রকল্প তাই দুর্দান্ত সাফল্য লাভ করেছে। এ সবই কিন্তু নেত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত। আর এসব প্রকল্পের সহায়তা নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের জনজীবনের মানোন্নয়ন ঘটেছে। ‘দিদিকে বলো’ প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি আমজনতার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা শুনেছেন তাঁর প্রতিনিধিরা। আর একুশের আগে মমতা বাড়ির মহিলাদের ভাঁড়ারে সঞ্চয়ের জন্য ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভোটে জিতেই সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন। এখন বাড়ির মহিলারা মাসে ৫০০ টাকা করে পান ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে। সে অর্থে তৃতীয় মমতা সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্পই এটা।
তাই তৃতীয় তৃণমূল সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির উদযাপনেও সেই জনতার কথাই মাথায় রেখেছেন সুপ্রিমো। কর্মসূচি অনুযায়ী, বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ নবান্নে জেলাশাসকদের বৈঠক। সেখানে আলোচনা হবে ৫ থেকে ২০ মে পর্যন্ত কীভাবে জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির প্রচার চলবে রাজ্যজুড়ে। প্রসঙ্গত, ৫ মে কলকাতায় তৃণমূলের নতুন অফিস থেকে ‘দিদিকে বলো-২’এর উদ্বোধন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের শুরু হবে সরাসরি জনসংযোগের কাজ। ২০২২-এর ২ মে এভাবেই নানা ব্যস্ততার মধ্যে কাটাবেন রাজ্যের সর্বময় অভিভাবক। আসলে প্রতিটি ২ মে-ই যে কাজেরই দিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.