Advertisement
Advertisement

Breaking News

CPM

অনিল বিশ্বাসকে মুছেই দিল আলিমুদ্দিন! ‘গণশক্তি’র সম্পাদক বদলে তীব্র ক্ষোভ CPM-এর অন্দরে

বিমান বসু এখন অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র! মত পার্টিকর্মীদের একাংশের।

Anil Biswas's name removed from Alimuddin as the editor of CPM's mouthpiece Ganashakti has been changed | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:November 7, 2023 9:11 am
  • Updated:November 7, 2023 12:10 pm  

রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ‘গণশক্তি’তে অনিল বিশ্বাস ঘরানাকে অপমান সেলিম শিবিরের! সিপিএমের প্রয়াত প্রাক্তন রাজ‌্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের (Anil Biswas) হাতে তৈরি করা দলীয় মুখপত্রের টিমটাকে ভেঙে দিলেন পার্টির বর্তমান রাজ‌্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md. Selim)। দলের ভিতরে ক্ষোভ, গণশক্তির ‘অরিজিন‌্যাল’ টিমকে অপমান করে কার্যত প‌্যারাশুটে করে শমীক লাহিড়ীকে নামিয়ে এনে পত্রিকার সম্পাদক পদে বসানো হল। সদ‌্য শেষ হওয়া পার্টির রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশন থেকেই প্রভাতী দৈনিক মুখপত্রের সম্পাদক বদল করেছে বঙ্গ সিপিএম (CPM)। পার্টির মুখপত্র ‘গণশক্তি’র সম্পাদক শমীক লাহিড়ীকে করে বতর্মান সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তীকে ‘জ্যোতি বসু স্টাডি অ‌্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর এর পরই সিপিএমের মুখপত্রের সম্পাদক বদল নিয়ে একাধিক প্রশ্ন, ক্ষোভ দানা বেঁধেছে পার্টির অভ‌্যন্তরে।

CPM State President Md Selim makes controversial comment on muslim
সিপিএমের বর্তমান রাজ্য সম্পাদক মহঃ সেলিম।

‘গণশক্তি’র এই টিম প্রয়াত অনিল বিশ্বাসের নিজে হাতে তৈরি করা। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিক, বামপন্থী ঘরানার সাংবাদিক অনিল বিশ্বাসই তৈরি করেছিলেন। একটা সময়ে অনিল বিশ্বাস রাজ‌্য সম্পাদক হয়ে গেলেও তিনিই নজর রাখতেন ‘গণশক্তি’ পত্রিকার কাজকর্মে। পরে সেখানে সম্পাদক হন নারায়ণ দত্ত। নারায়ণ দত্তর পর সম্পাদক হন অভীক দত্ত। তিনিও অনিল বিশ্বাসের হাতে তৈরি। অভীক দত্তর অকাল প্রয়াণের পর ‘গণশক্তি’র (Ganashakti) সম্পাদক হন দেবাশিস চক্রবর্তী। অত‌্যন্ত দক্ষ তাত্ত্বিক নেতা দেবাশিসবাবু। জেলায় জেলায় পার্টি ক্লাসগুলো একটা সময় দেবাশিস চক্রবর্তীকে দিয়ে করানো হত। ‘গণশক্তি’র ভিতরের সূত্রের খবর, দেবাশিস চক্রবর্তীকে সরানোটা টিম অনিল বিশ্বাস মেনে নিতে পারছে না।

Advertisement

[আরও পড়ুন: দিওয়ালিতে মোদির ‘লোকাল’ ক্যাম্পেনের ‘ভোকাল’ মুখ সিরিয়ালের ‘অনুপমা’]

আর এই টিম ভেঙেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট! অর্থাৎ অনিল বিশ্বাস যে একটা আলাদা ঘরানা তৈরি করে দিয়েছিলেন সেই তৈরি টিমকে ভেঙে দিয়ে শমীক লাহিড়ীকে গণশক্তির সম্পাদক পদে বসানো হল। আর এখানেই প্রশ্ন, যদি সম্পাদক বদল করতেই হত তাহলে সেই পদে দুজন যোগ‌্য লোক ছিলেন। অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী (সিনিয়র) ও অতনু সাহা। অতনু সাহা এখন ‘গণশক্তি’র সহকারী সম্পাদক। উল্লেখ‌্য, নারায়ণ দত্ত যখন সম্পাদক ছিলেন তখন সহকারী ছিলেন অভীক দত্ত। নারায়ণ দত্তর পর অভীক দত্তই সম্পাদক হয়েছিলেন। তাহলে এক্ষেত্রে অতনু সাহাকে কেন সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হল না? পার্টির একাংশ মনে করছে, এক্ষেত্রে অতনু সাহাকে কার্যত অপমানই করা হল। প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরেই গণশক্তির যাঁরা হোলটাইমার – কর্মী এবং সাংবাদিক, তাঁদের সঙ্গে সেলিম শিবিরের কিছু কিছু বিষয় মতপার্থক্যের খবর ছিটকে বেরচ্ছিল। এবার পুরোদস্তুর সেই টিমটাকেই কার্যত অস্বীকার করা হল বলে মনে করছে পার্টির অনেক রাজ‌্য নেতাই। দেবাশিস চক্রবর্তীকে পাঠানো হয়েছে সেই নিউটাউনে নির্মীয়মাণ ‘জ্যোতি বসু স্টাডি সেন্টারে’র দায়িত্বে।

সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস।

যেটা কবে চালু হবে তারও ঠিক নেই। সারা জীবন দক্ষতার সঙ্গে পার্টি করেছেন দেবাশিস চক্রবর্তী। এদিকে, পার্টি সূত্রে খবর, সিপিএমের প্রাক্তন রাজ‌্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের বর্তমান চেয়ারম‌্যান বিমান বসু এটা চাননি। কিন্তু বিমান বসু এখন অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র! তাঁর হাতে কিছু নেই। দুর্যোধনের হাতেই পার্টি রয়েছে। এই মন্তব‌্য পার্টির এক কমরেডের। এক হোলটাইমার বলেন, ‘‘বিমানদার এই বদলে আপত্তি ছিল। বিমানদা আমাদের বড় ভরসা। বিমানদা এখন অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের মতো, দুর্যোধনকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তাঁর নেই।’’ গণশক্তির নয়া সম্পাদক শমীক লাহিড়ী সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। আবার পার্টির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক।

সূত্রের খবর, ১ ডিসেম্বর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেবেন। উল্লেখ‌্য, শমীক লাহিড়ী অতীতে পার্টির ছাত্র সংগঠনের পত্রিকা ছাত্র সংগ্রামের সম্পাদকের ভূমিকা পালন করলেও মূল সাংবাদিকতার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না। গণশক্তির সঙ্গেও তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না। দ্বিতীয়ত, পার্টিকে ক্ষমতায় রাখা এবং তারপর পার্টি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কঠিন দিনে দাঁতে দাঁত চেপে যে লড়াইটা গণশক্তি দিয়েছে তাতে শমীক লাহিড়ী কোনওভাবেই যুক্ত ছিলেন না। ‘গণশক্তি’তে কর্তব‌্যরত একজন বলেন, ‘‘এর থেকে সরাসরি সেলিমদা নিজে সম্পাদক হয়ে গেলেই সুবিধা হত। উনি (সেলিম) কাউকে বিশ্বাস করেন না। সব জায়গায় পার্টিটা এই করে তুলে দিচ্ছেন।’’

[আরও পড়ুন: ২০১১-র পরের তৃণমূলের কাউন্সিলররা অ্যাক্সিডেন্টাল নেতা! বিস্ফোরক অর্জুন]

ক্ষোভে ফুটছে গণশক্তি শিবির। কিন্তু তারা খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ (Regimented) সৈনিক। অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী (সিনিয়র) সম্পাদক হতে পারতেন। তিনি এখন মার্কসবাদী পথ-এর সম্পাদক। অতনু সাহাই বা কেন সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন না? যেখানে প্রিন্টার্স লাইনে সহকারী সম্পাদক হিসাবে অতনু সাহা প্রতিষ্ঠিত। অনিল বিশ্বাসের হাতে তৈরি দক্ষ সাংবাদিক, দক্ষ টিম লিডার অতনুকে রাজ‌্য কমিটিতেও নেওয়া হয়েছে। সমস্ত রকম যোগ‌্যতা থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁকে সম্পাদক করা হল না? এসব নিয়ে পার্টির অভ‌্যন্তরে প্রশ্ন ও চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।

আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রে খবর, ‘গণশক্তি’ পত্রিকায় বেতন ও ভাতা সংক্রান্ত কিছু অসন্তোষ তৈরি হচ্ছিল। সেই সুযোগে নিয়ন্ত্রণটা সেলিম শিবির নিয়ে নিল। যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেই শমীক লাহিড়ী (Shamik Lahiri) ইতিমধ্যেই একাধিকবার ভোটে পরাজিত। এই দায়িত্ব দেওয়ায় তাঁর ভোটের রাস্তা থেকে পালিয়ে যাওয়ার একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ‘গণশক্তি’র দায়িত্ব পাওয়ায় পার্টির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকের পদ ছাড়তে হতে পারে শমীককে। অনেকের বক্তব‌্য, তাতেও উপকার হবে পার্টির। তিনি দায়িত্বে থেকে জেলায় পার্টিটাকে লাটে তুলে দিয়েছিলেন। সেখানেও আবার কোনও সুজনপন্থীকে জায়গা করে দিতে চান না সেলিম। পার্টিতে তিনি সুজনকে কোণঠাসা করতে চাপ বাড়াচ্ছেন বলেই পার্টি সূত্রে খবর।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement