সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একনজরে দেখলে সাধারণ বিজ্ঞাপন ছাড়া কিছুই নয়। জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানাতে আধখাওয়া মাখন বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করেছে আমূল। ননী চুরি করা গোপালের কথা ভেবে এহেন বিজ্ঞাপন বলে মনে হতেই পারে। তবে বিজ্ঞাপনের ক্যাচলাইনেই লুকিয়ে রয়েছে আসল মজা। রয়েছে টুইস্ট। অনেকেই বলছেন, বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা গরু পাচার মামলায় ধৃত অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) কথাই মনে করাচ্ছে এই ক্যাচলাইন। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই ভাইরাল আমূলের এই বিজ্ঞাপন। বিতর্ক দানা বেঁধেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে এই বিজ্ঞাপন। চলছে নিরন্তর আলোচনা। আমূলের বিজ্ঞাপনটিকে অবশ্য মোটেও ভালভাবে দেখছে না তৃণমূল।
শুক্রবার ‘আমূল বাংলা’র (Amul Bangla) টুইটার হ্যান্ডেলে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বিজ্ঞাপনটি পোস্ট করা হয়। ওই বিজ্ঞাপনে আধখাওয়া মাখন দেখে জন্মাষ্টমীর (Janmashtami 2022) সঙ্গে কৃষ্ণের ননী চুরির যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। সেটাই স্বাভাবিক। বিজ্ঞাপনের ক্যাচলাইনটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পুরাতন ভৃত্য’ কবিতা থেকে নেওয়া বহুচর্চিত লাইন ‘কেষ্টা বেটাই চোর’ ব্যবহার করা হয়েছে।
অনেকেই বলছেন, দ্বৈত অর্থে ব্যবহার হয়েছে ক্যাচলাইনটি। কারণ, বর্তমান রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ‘কেষ্ট’। কারওরই অজানা নয় যে, বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ মহলে কেষ্ট হিসাবেই পরিচিত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বহু নেতানেত্রীদের মুখে মুখে ফেরে সেই নাম। আবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই তাঁকে গরু পাচার মামলাতেই গ্রেপ্তার করেছে। তাই কারও কারও মতে, আমূলের বিজ্ঞাপনে থাকা ‘কেষ্টা’ আসলে বীরভূমের কেষ্টই। অনুব্রতর কথাই হয়তো সুকৌশলে তুলে ধরা হয়েছে। যদিও বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের অনেকের মতে, এই বিজ্ঞাপন অবশ্যই অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত। তবে সংস্থাটি রাজনৈতিক কচকচানির মধ্যে নাক গলায়নি। এটি নিছক মজা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিজ্ঞাপনটিকে মোটেও ভালভাবে দেখছে না তৃণমূল (TMC)। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “মাখন তৈরির গুজরাটি সংস্থা একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছে। গুজরাট থেকে যে ধরনের রাজনীতি হচ্ছে তার মধ্যে একটা সংস্থা যদি ঢুকে যায় সেটা ঠিক নয়। আমি কারও পক্ষে বা বিপক্ষে বলছি না। কিন্তু যেভাবে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন তাতে রবীন্দ্রনাথের কাজকে বিকৃতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। তারা না জানে রবীন্দ্রনাথ, না জানে বাংলা। রবীন্দ্রনাথের ‘পুরাতন ভৃত্য’ থেকে একটি লাইন নিয়ে কটাক্ষ করে লিখেছেন। যে কারণে এটা করা হয়েছে তার সঙ্গে এই লাইন যেতে পারে না। যারা এটা করলেন তাদের অনুবাদকরা বলে দেননি বাংলা সাহিত্যের একটা গভীরতা আছে। এভাবে ব্যবহার করা যায় না।”
কুণাল ঘোষ আরও বলেন, “যার সম্পর্কে এটা রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, এই চরিত্রটা সমালোচিত হয় আবার নিন্দিতও হয়। নিজে কিছু চায় না। কিন্তু অন্ধ আনুগত্য রয়েছে। বিপদের দিনে, চরম অসুস্থতার দিনে, অন্যের বিপদে আনুগত্যের প্রমাণ দিয়ে গিয়েছে সেখানে এই চরিত্রকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথকে বিকৃত করে ব্যবহার করা চরম ভুল। আমরা নিন্দা করছি। এটা সস্তা মানসিকতা। যে বাতাবরণে এই লাইনটি ব্যবহার করা হল আমি তাদের বলছি যদি শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে এটা বলা হয় তাতে অসুবিধা নেই। যদি রাজনৈতিক হাওয়া দেওয়া হয় তবে আনুগত্যের প্রতীকের লাইনও মনে করিয়ে দেব। কারণ, মনে রাখতে হবে রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতার আরেকটা লাইন রয়েছে। যত পায় বেত না পায় বেতন তবু না চেতন মানে।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.