ফাইল ছবি
শুভঙ্কর বসু: আমফানের তাণ্ডবে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জেরে স্তব্ধ এটিএম পরিষেবা। বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় কেটে যাওয়ার সাতদিন পরও শহরতলী ও জেলার এটিএম পরিষেবার বেহাল দশা। বিশেষত দুই ২৪ পরগনা, হুগলি ও নদিয়ার একাধিক এটিএম এখনও কাজ করছে না। দীর্ঘ লকডাউনের জেরে এমনিতেই মানুষের পকেট ফাঁকা। তারপর গত বুধবারের পর থেকে একটানা নগদ তুলতে না পারায় আতান্তরে পড়েছেন বহু মানুষ। পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় হচ্ছে না অনলাইন লেনদেনও। সব মিলিয়ে কার্যত নরক যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
কলকাতার একাংশ ও তিন জেলার সিংহভাগ এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় এটিএম পরিষেবা ও টেলিকম ব্যবস্থায় সরাসরি প্রভাব পড়েছে। বুধবারের পর থেকে কার্যত গুমটি ঘর হয়ে পড়ে রয়েছে একাধিক এটিএম কাউন্টার। যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরেছে সেখানেও পরিষেবা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। শুধু বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে পরিষেবা স্তব্ধ হয়েছে তাই নয়, ঝড়ের তান্ডবে রাস্তা অবরুদ্ধ থাকায় গত ক’দিন এটিএমে নগদ পৌঁছতে আসতে পারেনি গাড়িগুলি। ফলে এটিএম চালু হলেও তাতে পর্যাপ্ত নগদ নেই। পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও দিন দুয়েক লাগবে বলে খবর।
কলকাতা ও চার জেলা মিলিয়ে প্রায় ৬৮০০ এটিএম রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ এটিএমই কাজ করছে না বলে খবর। বিভিন্ন ব্যাংকের
এটিএমগুলিতে নগদ পৌঁছোনোর দায়িত্বে রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। কোম্পানিগুলির তরফে জানানো হয়েছে, এমনিতেই লকডাউনের জেরে কম কর্মী নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তারপর ঝড়ের কারণে বেশ কয়েকটি গাড়ি বসে গিয়েছে। ফলে স্বাভাবিক পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না।
শুধু যে এটিএম পরিষেবা বিপর্যস্ত তাই-ই নয়, ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় অনলাইন লেনদেন করা যাচ্ছে না। ফলে রীতিমতো অর্থসংকটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। হাতে নগদের জোগান না থাকলেও লকডাউনে অনেকেরই ভরসা ছিল অনলাইন লেনদেন। এবার তাও মুখ থুবড়ে পড়ায় মুদি দোকান থেকে সবজি বাজার সর্বত্র বাকির খাতার বহর চড়ছে। আর কতদিন এভাবে কাটাতে হবে তা ভেবেই কুল কিনারা করতে পারছেন না সাধারণ মানুষ।
রাজ্যের তরফে অবশ্য বিদ্যুৎ ও টেলি যোগাযোগ পরিষেবা ক্রমেই বহুলাংশে স্বাভাবিক হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা ভিন্ন।
রাজ্য সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে, সব মিলিয়ে আমফান বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে প্রায় ৬০ শতাংশ পরিষেবা স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়েছে। পঞ্চায়েত এলাকার পরিসংখ্যান না জানানো হলেও প্রায় ১০০টির মত পুর এলাকায় বিদ্যুৎ চালু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। আট জেলায় ২৭৩টি ক্ষতিগ্রস্ত সাবস্টেশনের মধ্যে ২১৩টি মেরামত করা গিয়েছে বলে দাবি রাজ্যের। এছাড়াও ৮৫ শতাংশ টেলি কমিউনিকেশন পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে বলে খবর। সমস্ত জাতীয় ও রাজ্য সড়ক খোলা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে, কলকাতার পাশাপাশি ঝড় বিধ্বস্ত দুই ২৪ পরগনা ও নদিয়ার একটা বড় অংশ এখনও বিদ্যুৎহীন। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে টেলিকম ব্যবস্থায়। ঠিকমতো কাজ করছে না ইন্টারনেট। ভোডাফোন, আইডিয়া, এয়ারটেলের মতো বেসরকারি টেলিকম সংস্থার পরিষেবা এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি। বুধবার ঝড়ের পর থেকে কার্যত শুয়ে পড়েছে সরকারি টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল। কিছু কিছু এলাকায় রিলায়েন্স জিওর পরিষেবা মিললেও যা অনলাইন লেনদেনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। সরকারি-বেসরকারি সমস্ত টেলিকম সংস্থার সকলেরই দাবি, যতক্ষণ না বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে ততক্ষণ কিছু করার নেই। একটি মোবাইল টাওয়ার পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবে চলতে অন্তত তিনটি ফেজের বিদ্যুৎ প্রয়োজন।
বেসরকারি টেলিকম সংস্থার এক কর্তা বলেন, “একটি বা দুটি ফেজ চালু হলেই সমস্যা মিটে যাবে এমনটা নয়, তিনটি ফেজ একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। ফলে চালু করা হলেও মোবাইল টাওয়ার বসে যাচ্ছে।” এছাড়াও বর্তমানে মোবাইল নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা পুরোপুরি অপটিক্যাল ফাইবারের উপর নির্ভরশীল। ঝড়ের কারণে একাধিক টেলিকম সংস্থার অপটিক্যাল ফাইবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যার জেরে মোবাইল টাওয়ার গুলি পুরোপুরি কাজ করছে না। আর দুয়ের জাঁতাকলে পড়ে সাধারণ মানুষের সমস্যা ও ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.