কালীঘাটে পুজো দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ফাইল চিত্র।
স্টাফ রিপোর্টার : দলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা রিপোর্ট বাংলার লোকসভা আসনের লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারছে না। বঙ্গ বিজেপির অন্দরে আদি-নব্য কোন্দলও চরমে। রাজ্যনেতাদের ব্যর্থতা ও কাজকর্মে বিরক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। আজ, মঙ্গলবার কলকাতায় দু’দফায় সাংগঠনিক বৈঠক করে বঙ্গ নেতাদের কড়া বার্তা দিতে চলেছেন ক্ষুব্ধ শাহ। শাহর সঙ্গে এই ঝটিকা সফরে থাকছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাও (JP Nadda)। সোমবার মধ্যরাতের পর শাহ পৌঁছন শহরে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে শাহর সফরসঙ্গী হিসাবে বিজেপির তরফে শুধু সুকান্ত মজুমদারের নাম জানানো হয়। বিবৃতিতে শুভেন্দু অধিকারীর নাম নেই। কলকাতায় এসে জোড়াসাঁকোর গুরুদ্বারে গেলেন শাহ। সেখানে শাহর সঙ্গী শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার, অগ্নিমিত্রা পাল এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়। এর পর কালীঘাটে পুজো দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্দিরের দু-নম্বর গেটে রেড কার্পেট বিছিয়ে অভ্যর্থনা। নিরাপত্তার জন্য আপাতত সাধারণ ভক্তদের মন্দিরে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা।
একুশের নির্বাচনে স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার পর থেকেই বাংলায় দলের গ্রাফ ক্রমশ নামছে। বুথে সংগঠন নেই। আদি—নব্য দ্বন্দ্ব প্রকট আকার নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে একুশের বিধানসভা ভোটের পর একের পর এক নির্বাচন ও উপনির্বাচনে পরাজয় হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলায় দলের অবস্থা নিয়ে দিল্লির নেতাদের কার্যত ভুল রিপোর্ট দিয়েছেন শুভেন্দু-সুকান্তরা। বঙ্গ নেতাদের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতা বারেবারে সামনে এসেছে। দলের মধ্যে বড় অংশ এটা নিয়ে সরবও। অস্বস্তি বাড়িয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক নাড্ডা-ঘনিষ্ঠ অনুপম হাজরা। রাজ্যনেতাদের পাঠানো তথ্যে আর বিশ্বাস করতে চাইছেন না শাহ-নাড্ডারা। কারণ, বাংলায় ভোটের ময়দানে সুকান্ত-শুভেন্দুদের কোনও তথ্যই মেলেনি। উল্টে দলের কঙ্কালসার অবস্থাটা বারবার সামনে এসেছে।
লোকসভা ভোটের আগে বঙ্গ বিজেপির সমস্ত রিপোর্টই জমা পড়েছে অমিত শাহর কাছে। বাংলায় দাঁড়িয়ে লোকসভায় ৩৫ আসনের লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু দলীয় সমীক্ষা এবং মুম্বইয়ের একটি পেশাদার সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্ট, এইমুহূর্তে লোকসভা ভোট হলে ৫টি আসনও নিশ্চিত নয়। রাজ্যনেতাদের ব্যর্থতা নিয়ে একাধিক অভিযোগের পাশাপাশি তাদের পারফরম্যান্সে ক্ষুব্ধ শাহ তাই এক মাসের মধে্যই কলকাতায় এসে আজ বৈঠক করছেন। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীদের উপর কার্যত আস্থা হারিয়েই দলের সর্বভারতীয় সভাপতিকে নিয়ে এই প্রথম একসঙ্গে রাজ্য বিজেপির শীর্ষনেতাদের কড়া দাওয়াই দিতে চলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সূত্রের খবর, রাজ্যনেতাদের ভুলভাল রিপোর্টিংয়ে বাংলায় লোকসভা ভোটের অঙ্ক কার্যত গুলিয়ে যাচ্ছে শাহ—নাড্ডাদের। আদি বিজেপির একাংশ মনে করছে, আজকের বৈঠকে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদের পারফরম্যান্স নিয়ে বিরক্তি ও ক্ষোভ উগরে দিতে পারেন শাহ—নাড্ডা দু’জনেই। পাশাপাশি গত মাসেই ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তাঁর জনসভায় জনসমাগম ‘ফ্লপ’ হওয়াতেও যথেষ্ট ক্ষুব্ধ অমিত শাহ। তাই বছর শেষে রাজ্যে কোনও প্রকাশ্য সমাবেশে অনুমতি দেননি। ইন্ডোর বৈঠকই করতে চেয়েছেন শাহ। সোমবার মাঝরাতে প্রায় আধঘণ্টার ব্যবধানে প্রথমে শাহ ও পরে নাড্ডা শহরে পা রেখেছেন। আজ, মঙ্গলবার সকালে প্রথমেই তাঁরা দু’জনে যাবেন মহাত্মা গান্ধী রোডে গুরুদ্বার এবং পরে কালীঘাট মন্দিরে। এরপর দুপুরে দলের কোর কমিটির সঙ্গে ঘণ্টা তিনেকের বৈঠক নিউটাউনের হোটেলে।
সেখান থেকে ন্যাশনাল লাইব্রেরির অডিটোরিয়ামে সোশ্যাল মিডিয়া টিমের সঙ্গে বৈঠক। শাহ—নাড্ডা কথা বলবেন সোশ্যাল মিডিয়ায় ইনফ্লুয়েন্সার বিজেপি সমর্থকদের সঙ্গে। এই বৈঠক শেষে নিউটাউনের হোটেলে রাজ্য পদাধিকারী ও দলীয় সাংসদদের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। দু’টি সাংগঠনিক বৈঠকে দলের কোন্দল, রাজ্য নেতৃত্বের ব্যর্থতা, সমস্ত নিয়েই বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে আন্দোলনের রূপরেখা ও রণকৌশল নিয়েও একাধিক নির্দেশও দিয়ে যাবেন দলের প্রাক্তন ও বর্তমান সর্বভারতীয় সভাপতি।
পাশাপাশি বাংলায় প্রার্থী তালিকা থেকে কোন কোন সাংসদ বাদ পড়তে পারেন তারও একটা ইঙ্গিত আজ শাহর বৈঠকে মিলতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। কারণ, এবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে কোন সাংসদদের প্রার্থী করা হবে না সেটা জানুয়ারি মাসের মধ্যেই স্পষ্ট করে দেবেন শাহ—নাড্ডারা। এদিকে, বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে বিজেপি যে বাংলায় সমীক্ষা করছে লোকসভা আসনের তা সোমবার স্বীকার করে নিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। এদিকে, এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শাহর বৈঠকে ডাক পাননি কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.