রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: শেষ যেবার অমিত শাহ (Amit Shah) রাজ্যে এসেছিলেন, সেবার শুভেন্দু অধিকারী-সহ (Suvendu Adhikari) তৃণমূলের একঝাঁক নেতা বিজেপিতে যোগ দেন। আগামিকাল অর্থাৎ শুক্রবার ফের রাজ্যে পা রাখছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এবারে যোগদানের তালিকায় কারা? শাহী সফরের আগে রাজ্য রাজনীতিতে ঘোরাফেরা করছে সেই প্রশ্নই। বিজেপি সূত্রের দাবি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দু’দিনের সফরে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী-সহ তৃণমূল ও অন্যান্য দল থেকে একাধিক হেভিওয়েট নেতা গেরুয়া শিবিরে যোগ দেবেন। আর শুধু যোগদান নয়, অমিত শাহর এই সফর আগামী দিনে রাজ্য তথা গোটা দেশের রাজনীতির রূপরেখা তৈরি করতে পারে। কারণ, এরাজ্যের ঠাকুরনগরের জনসভা থেকেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ইস্যুতে অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শাহ রাজ্যে আসছেন শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ। শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়ে যাবে তাঁর ঠাসা কর্মসূচি। শনিবার সকালে ৯টা ১৫ মিনিটে রাজ্যের সিআরপিএফ (CRPF) আধিকারিকদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপরই শুরু হবে দলীয় কর্মসূচিগুলি। সিআরপিএফের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের পরই তিনি উড়ে যাবেন মায়াপুর। এর আগেও রাজ্যে এসে একাধিক মন্দির দর্শনে যেতে দেখা গিয়েছে। এবারেও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। শনিবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিট থেকে মায়াপুর ইসকন মন্দিরে পুজো দেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। ইসকন (ISKON) মন্দিরেই মধ্যাহ্নভোজন সারার কথা অমিত শাহর। ইসকন থেকে সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চলে যাবেন ঠাকুরনগরে। দুপুর দুটো ৫০ মিনিট নাগাদ ঠাকুরনগরে মতুয়াদের একটি সভায় যোগ দেবেন অমিত। মূল অনুষ্ঠান মতুয়াদের হলেও, পাশের মঞ্চে বিজেপি নেতারাও উপস্থিত থাকবেন। ঠাকুরনগরের এই সভা থেকেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (CAA) ইস্যুতে অবস্থান স্পষ্ট করার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। সিএএ বাংলার নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বাংলার প্রায় ৩০ টি আসনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর মতুয়া ভোট। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েই মতুয়াদের সমর্থন পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু গত ১৩ মাসে এই আইন কার্যকর না হওয়ায় মতুয়াদের মধ্যেও চাপা অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। আইন কার্যকর করার দাবিতে একাধিকবার সরব হয়েছেন খোদ বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরও। ঠাকুরনগরের সভায় অবস্থান স্পষ্ট না করলে, অমিতের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই এই সভায় নজর রয়েছে গোটা দেশের। পাশাপাশি, ঠাকুরনগরের সভা থেকেও বেশ কিছু হেভিওয়েটের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা। নজর থাকবে সেদিকেও। ঠাকুরনগরের সভা থেকে রাতে কলকাতায় ফিরে আবার ঠাকুরনগরে বিশেষ অনুষ্ঠানে।
রবিবার সকালে ১০টা ৪৫ মিনিট নাগাদ ভারত সেবাশ্রম সংঘের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা শাহর। সেখান থেকে তিনি যাবেন অরবিন্দের বাড়িতে। গতবছর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির মিছিলের দিন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে বহু জলঘোলা হয়েছে। তারপর মনিষীদের অসম্মান নিয়ে বহু কটু কথাও শুনতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। স্বাভাবিকভাবেই অমিত শাহর এই কর্মসূচি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এরপর দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে জনসভা করতে যাবেন অমিত। সেই জনসভাতেই রাজ্যের একাধিক হেভিওয়েট নেতা যোগ দিতে পারেন গেরুয়া শিবিরে। বিজেপির দাবি, রাজ্য রাজনীতিতে পরীক্ষিত এবং বিশ্বস্ত একাধিক মুখ ডুমুরজলার মাঠ থেকেই বিজেপির পতাকা হাতে নেবেন। জল্পনায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈশালী ডালমিয়া, প্রবীর ঘোষালদের নাম। যদিও সরকারিভাবে বিজেপি নেতারা কারও নাম নিয়ে মুখ খোলেননি।
ডুমুরজলার জনসভা শেষে অমিত শাহ যাবেন উলুবেড়িয়ায়। সেখানে এক বাগদি পরিবারে মধ্যাহ্নভোজন সারার কথা তাঁর। প্রসঙ্গত, এর আগেও রাজ্যে এসে কৃষক, আদিবাসী এবং মতুয়া পরিবারে মধ্যাহ্নভোজন সেরেছেন তিনি। সেই তালিকায় নয়া সংযোজন বাগদি পরিবার। মধ্যাহ্নভোজন শেষে উলুবেড়িয়ায় একটি রোড শো করার কথা অমিতের। সন্ধেবেলা শহরে ফিরে আবার দলের রাজ্য নেতাদের সঙ্গে রণকৌশল নিয়ে বৈঠকও করতে পারেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.