সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এনআরসির সমর্থন করেন কি? বিজেপি সভাপতি এই প্রশ্নের প্রত্যাশিত জবাবই পেলেন সমবেত জনতার কাছ থেকে। কিন্তু সেই শব্দের তীব্রতা ততটা ছিল না যতটা বিজেপি সভাপতি প্রত্যাশা করেছিলেন। সেজন্যই হয়তো বারবার তাঁকে বলতে হল, “আরও জোরে বলুন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বধির।” শুধু এই একবার নয়, এমন সুর কেটেছে একাধিকবার। কিন্তু তাতে কী, হাজারো মানুষকে সাক্ষী রেখে মেয়ো রোড থেকে তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা উচ্ছেদের ডাক দিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি অমিত শাহ।
অমিতের সভার সুর বেঁধে দিয়েছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এনআরসি, রোহিঙ্গা বেকার সমস্যা, ভোটে হিংসা, স্কুল কলেজের দুরবস্থা, সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে একাধিক ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণের চেষ্টা করলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। দিলীপের বাঁধা সুর আরও খানিকটা চড়ালেন বিজেপি যুবা মোর্চার সর্বভারতীয় সভানেত্রী পুনম মহাজন। পুনমের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ বানিয়ে দিয়েছেন মমতা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে ইউ-টার্ন দিদি বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। তৃণমূল কংগ্রেসকে পুনম কটাক্ষ করলেন টেরর মেকিং মেশিন বলে।
বিজেপি বাংলা-বিরোধী, অমিতের সভার আগে শহর ছেয়ে গিয়েছিল এই ব্যানারে। এই বাংলা-বিরোধী ভাবমূর্তি ঝেড়ে ফেলতে শুরুতেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উদাহরণ টেনে আনলেন। আমরা বাংলা বিরোধী নই-মমতা বিরোধী। প্রত্যাশিতভাবেই বক্তব্যের শুরু থেকেই এনআরসি ইস্যুতে মমতাকে কাঠগড়ায় তুললেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। এনআরসি ইস্যুতে মমতার নীতি দ্বিমুখী, এই অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য বিজেপি সভাপতি টেনে আনেন ২০০৫ সালের উদাহরণ। সেসময় সংসদে দাঁড়িয়ে রাজ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এনআরসির বিরোধিতা কেন করছেন মমতা? প্রশ্ন অমিতের। বিজেপি সভাপতির অভিযোগ, ভোটব্যাংকের জন্য এনআরসির বিরোধিতা করছেন মমতা থেকে রাহুল সব বিরোধীই। এনআরসি ইস্যুতে অপার বাংলার হিন্দু ভোটাররা যাতে হাতছাড়া না হয়ে যায় যা নিশ্চিত করতে অমিত শাহ এদিনের সভা থেকে স্পষ্ট করে দেন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, বুদ্ধ, শিখ শরণার্থীরা এদেশেই ঠাঁই পাবেন।তবে, বাংলায় ক্ষমতায় এলে এনআরসি হবে কিনা তা স্পষ্ট করেননি বিজেপি সভাপতি।
এনআরসি ছাড়া অন্য ইস্যুতে সুর খুব একটা চড়াননি বিজেপি সভাপতি। তবে, পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা নিয়ে সরব হলেন বিজেপি সভাপতি। দাবি, করলেন পঞ্চায়েত ভোটে ৬৫ জন বিজেপি কর্মকর্তাকে খুন করা হয়েছে। এই হিসেবেও কিছুটা গড়মিল করে ফেললেন বিজেপি সভাপতি। কারণ তাঁর আগের বক্তা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করেছিলেন বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২৭ জন বিজেপি কর্মী মারা গিয়েছেন। অমিতের বক্তব্যে কীকরে সেই ২৭ হয়ে গেল ৬৫, প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।
এখানেই শেষ নয়, সুর চড়াতে সভার শেষে ধর্মের তাসটিও চেনা ভঙ্গিতেই খেলেছেন বিজেপি সভাপতি। মমতার আমলে বাংলায় দুর্গাপুজা করতে দেওয়া হয় না, সরস্বতী পুজো করতে দেওয়া হয় না। আমরা ক্ষমতায় এলে কারও হিম্মত হবে না হিন্দুদের পুজো রোখার। মঞ্চ থেকে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা যাই আসুক, এদিনের লোকসমাগম অবশ্য স্বস্তি দেবে বিজেপি শিবিরকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.