সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জ্যৈষ্ঠের শুক্লপক্ষের পূন্য ষষ্ঠী তিথি বলে কথা। ইয়াব্বড় থালায় সাজানো সরু চালের ভাত, পাশে থরে থরে সাজানো পাঁচ রকমের ভাজা, শাক, মাছের মুড়ো দিয়ে মুগের ডাল, সরষে পাবদা, ইলিশ ভাপা, পোলাও, কচি পাঁঠার ঝোল, কই মাছ… আরও কত কী! কবজি ডুবিয়ে জামাইদের রসাস্বাদনের দিন! কিন্তু হায়, করোনা আর আমফানের দাপটে সেই দৃশ্য বোধহয় বাঙালির অন্দরমহল থেকে বিলুপ্ত হবে বলেই ভেবে নেওয়া হয়েছিল প্রথমটায়। কিন্তু কোথায় কী? সকাল হতেই বাজারে থলে হাতে ভিড় করেছেন শ্বশুর-শাশুড়িরা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বালাই নেই! উপরন্তু মাছ-মাংস, শাক-সবজিও বিকোচ্ছে চড়া দামে। ভিড়ও আর পাঁচটা দিনের থেকে তুলনামূলক বেশি।
ইলিশ বিকোচ্ছে ১৫০০-২০০০ টাকা কেজি দরে। দামের জন্য রুই-কাতলার দরও নেহাত কম ছিল না বাজারে। কেজি প্রতি ৫০০-৬০০ টাকা। পাঁঠা, খাসির দাম কেজি প্রতি ৮০০-৯০০ টাকা। মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সবজির দামও। বিশেষ করে শাক, বেগুন, ক্যাপসিকাম, টমেটো, এঁচোড়, টম্যাটোর।
বাঙালি বলে কথা, গুছিয়ে খাওয়াটাও যে পরম ধর্মের মধ্যেই পড়ে! লকডাউন হোক আর করোনার ভয়, এখনও অবধি বাঙালিকে বাজারবিমুখ করার সাহসটি পায়নি। তা জামাইষষ্ঠীর দিনেও তার অন্যথা হয় কী করে! বিশেষ দিনে হেঁশেলে পঞ্চব্যাঞ্জন তো মাস্ট! অতঃপর সামাজিক দূরত্ব ভুলে হামলে পড়ল মাছ-মাংস, ফল-সবজির দোকানে। মুরগির লেগ পিস চাই, পাঁঠার বুকের দিকটা দিও, সবজি টাটকা তো?… ঠেলাঠেলি করে এসব হাকডাকেরও অন্ত রইল না। একে লকডাউন, তায় আবার বাজারে আগুন দাম, মধ্যবিত্তদের অবশ্য থলে ভরতি করতে নাভিশ্বাস খানিক উঠল বটে!
জামাই আদরের দিন বলে কথা। কোনও রকম খামতি তো রাখা যায় না! জামাই আসুক চাই না আসুক। নমো নমো করে তো আর সারা যায় না, তাই না! নিদেনপক্ষে ভিন রাজ্য কিংবা উত্তরের জেলায় অফিসের কাজে মুখ গুঁজে বসে থাকা জামাইকে না হয় ‘ডিজিটালি’ই আশীর্বাদ সারা হোক। থরে থরে খাবার সাজিয়ে, প্রদীপ জ্বালিয়ে ভিডিও চ্যাটেই জামাইষষ্ঠী পালন হোক। তবে সুবিধে পাড়ার জামাইদের কিংবা যাঁরা অন্তত একই এলাকায় থাকেন। তাঁদের জামাই আদরে কোনওরকম ভাঁটা পড়েনি। শ্বশুরমশাইরা সকাল হতেই বাজারের থলে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন মাছ-মাংসের দোকানের সামনে লাইন দিতে।
শহরের বিভিন্ন বাজারে এদিনের ভিড় দেখে মনেই হবে না যে লকডাউন চলছে। সামাজিক দূরত্ব ভুলে জটলা করে বাজার করতে ব্যস্ত মানুষ। মানিকতলা, ভবানীপুর, গড়িয়াহাট, বাঘাযতীন-সহ একাধিক বাজারে ধরা পড়ল একই রকম চিত্র। এদিকে, পুলিশরা বারবার মানুষকে সতর্ক করেই চলেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.