নব্যেন্দু হাজরা: লকডাউনের বাজারে রোগীর দেখা নেই নার্সিংহোমগুলিতে (Nurshing Home)। অন্য অসুখ সারাতে হাসপাতাল—নার্সিংহোমে রোগী সমাগম কমেছে যথেষ্ট। উপরন্তু নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালে নিয়ে আসা ও পৌঁছে দেওয়াতেই হাসপাতালে খরচ বেড়েছে বিস্তর। ডাক্তারবাবুরাও সবসময় আসতে চাইছেন না। ফলে করোনা রোগীর জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বাদ দিলেও অন্যান্য বহু বেসরকারি হাসপাতাল—নার্সিংহোম পড়েছে ব্যবসায়িক সংকটে। রোগীর সংখ্যা পর্যাপ্ত না হওয়ায় ঝাঁপ পড়তে শুরু করেছে হাসপাতালগুলিতে। লকডাউন ও করোনার জেরে গোটা রাজ্যে প্রায় ৪০টির বেশি নার্সিংহোম এই কয়েকদিনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাদের একটাই যুক্তি, আয়ের তুলনায় ব্যায় বেশি হচ্ছে। ফলে হাসপাতাল চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। পাশাপাশি করোনা আবহে হাসপাতালে রাখতে হচ্ছে ভেন্টিলেটর-সহ চিকিৎসার আধুনিক পরিষেবা। সেই খরচ কুলোতে গিয়েও হিমশিম খাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা। তাই ঘট উলটে দেওয়াকেই শ্রেয় মনে করছেন নার্সিংহোমের মালিকেরা।
করোনার সর্বগ্রাস না হয় রয়েইছে, কিন্তু বাকি অসুখের হল কী? কেনই বা অন্য অসুখ কমে গিয়েছে? হাসপাতালে কেন যাচ্ছেন না রোগীরা? চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, লকডাউনের ফলে মানুষের জীবন একটা সিস্টেমে আটকে গিয়েছে। রাস্তায় বের হচ্ছেন না মানুষ। তাই আনুসঙ্গিক যে অসুখগুলো হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তা হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে করোনার আতঙ্কে অতিরিক্ত সতর্কতা মেনে চলছে প্রতিটি বাড়ির সদস্যরা। তাই আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেও যে সামান্য জ্বর, সর্দি, কাশি হত সেটাও কমতে শুরু করেছে। কাজের চাপ না থাকায় বাড়িতেই অনেকে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন শান্তিতে। মানুষ খাওয়া—দাওয়া থেকে ঘুম সব কিছুই করছেন নিয়ম মেনে। এসব কিছুর কারণেই মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে। নতুন করে কোনও অসুখে আক্রান্তও হচ্ছেন না তাঁরা। পথদুর্ঘটনাও ঘটছে না, ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভিড় কমেছে বেসরকারি হাসপাতালে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য চেয়ারম্যান শেখ আলহাজউদ্দিনের কথায়, “ক্ষতির আশঙ্কায় রাজ্যে এখনও পর্যন্ত বেশ কিছু নার্সিংহোম বন্ধ। সব চেয়ে বেশি বন্ধ হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর ও বর্ধমানে। মানুষ এখন নিয়ম মেনে জীবন—যাপন করছেন। তাই অসুস্থ হওয়া অনেকটাই কমে গিয়েছে।”
যে কয়েকজন রোগী আগে থাকতে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তাঁদের অনেককেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর যাঁদের ক্রনিক সমস্যা রয়েছে, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শমতোই ওষুধ খাচ্ছেন। অনেকে এই সময় বাইরে বেড়িয়ে হাসপাতালে গিয়ে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন না। তাতেই ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন মালিকরা। তাই হাসপাতাল বন্ধ রাখছেন অনেকেই। তার মধ্যেও কোনও কোনও হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর দেহে করোনার সংক্রমণ দেখা দিলে বাধ্য হয়েই সেই হাসপাতাল বন্ধ করে দিচ্ছে প্রশাসন। এই একাধিক কারণেই শহরতলি ও জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তবে একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা জানান, গুরুতর অসুস্থরা যাতে না ফিরে যান, সেটাও দেখা হচ্ছে। সব নার্সিংহোম যে ক্ষতির আশঙ্কায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তেমনটা নয়। রোগীদের স্বার্থে অধিকাংশ হাসপাতালেই পর্যাপ্ত পরিকাঠামো রাখা হয়েছে। তবে ব্যায়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয় না হলে হাসপাতালে ঝাঁপ ফেলার কথা ভাবছেন হাসপাতাল মালিকেরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.