নব্যেন্দু হাজরা: রাস্তাজুড়ে চলছে বিয়ের শোভাযাত্রা। ফাটছে বাজি। চলছে নাচ। আর তার পিছনে আটকে কয়েকশো গাড়ি। পথে আটকে অ্যাম্বুল্যান্সও। ভিতরে রোগী কাতরে কাতরে মরে গেলেও হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনও উপায় নেই। কোনও পরিবারের উৎসবের জেরে অন্য পরিবারে নেমে আসতে পারে অন্ধকার। রাতের হাওড়ায় দুর্ভোগকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন নিত্যযাত্রীরা। রাত বাড়লে লরি বেরনোর দুর্ভোগ তো ছিলই। আর এই সময় নতুন সংযোজন বিয়ের শোভাযাত্রা ও বেআইনি পার্কিং। যার জেরে দিনের বেলায় যে দূরত্ব যেতে সময় লাগে ২০ মিনিট। রাতে সেই দূরত্বই যেতে লেগে যাচ্ছে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট। কখনও বা তার চেয়েও বেশি। যানজটের গেরোয় টোটোগুলোও নট নড়নচড়ন। আটকে থাকছে অ্যাম্বুল্যান্সও। ফলে বিয়ের মরশুমে যান-যন্ত্রণায় জেরবার বালি, বেলুড়, লিলুয়ার যাত্রীরা।
মঙ্গলবার রাত ৯টা ৫০ নাগাদ হাওড়া থেকে বালিগামী ৫৪ নম্বর বাসে উঠেছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মচারী সনাতন বিশ্বাস। বাস যখন বেলুড় বাজারে পৌঁছাল তখন রাত ১১টা ২০ বেডে গিয়েছে। হাওড়া এসি মার্কেটের কাছের জ্যাম তখনও কাটেনি। রাত বাড়ায় দুয়েকটি মোড় ছাড়া রাস্তায় ট্রাফিকেরও দেখাই পাওয়া যায়নি। একজন পুলিশের পক্ষে তা সামাল দেওয়াও সম্ভব হয়নি। যা হওয়ার তাই হয়েছে। যানজটের ফাঁপরে নাজেহাল হয়েছে সাধারণ মানুষ। একাধিক জায়গায় অনেক অ্যাম্বুল্যান্সও আটকে পড়েছিল এই জ্যামে। এটা শুধু মঙ্গলবার নয়। বিয়ের মরশুমে এখন এই দুর্ভোগ এখন নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, এই রুটে যাতায়াতটাই আতঙ্কের হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গাড়ি ঘোরানোর জায়গা নেই। একবার জ্যামে ফাঁসলে ঘণ্টার পর ঘন্টা পার হলেও কিছু করার থাকে না। ট্রাফিক পুলিশও মেনে নিচ্ছে এই যানজটের কথা।
এই জ্যামের কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে তিনটি কারণ। প্রথমত, লিলুয়া-বেলুড়জুড়ে একাধিক মিল-কারখানা রয়েছে। রাত ন’টার পর সেগুলোতে লরি ঢোকে এবং বেরোয়। ফলে ট্রাকের ভিড়ে আটকে পড়ে অন্য গাড়ি। এই সমস্যা গোটা বছর ধরেই আছে। তবু লরির মাধ্যমে যে যান-যন্ত্রণার দুর্ভোগ হয়, ট্রাফিককর্মীরা কিছুটা হলেও কমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বিয়ের মরশুম হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ। হাওড়া থেকে বালি যাওয়ার এই জিটি রোডে একাধিক বিয়েবাড়ি আছে। কিন্তু ভাড়া খাটানো এই বিয়েবাড়িগুলিতে কোনও পার্কিংয়ের জায়গা নেই। ফলে যে অতিথিরা সেখানে আসেন, তাঁদের গাড়ি রাখা থাকে রাস্তার উপর। প্রতি বিয়েবাড়ি পিছু ১০-১৫টার বেশি গাড়ি সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কখনও কখনও সংখ্যাটা আরও বাড়ে। এমনিতে সরু রাস্তা। দুটো গাড়ি পাশাপাশি যেতে পারে না। তার উপর এই গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখায় সমস্যা আরও জটিল হয়। গাড়ি পাস করাতে দীর্ঘক্ষণ লেগে যায়। আর তার চেয়ে আরও সমস্যা বাড়ায় এই বিয়েবাড়িগুলোর শোভাযাত্রা। নাচ-গান, বাজি ফাটানো চলে রাস্তাজুড়ে। আর তারই পিছনে আটকে যায় গাড়ি। পুলিশের কথাও অনেক সময় শুনতে চান না বিয়েবাড়ির লোকজন। আর আনন্দ-উৎসবের কথা ভেবে পুলিশও বিশেষ কিছু বলে না। কিন্তু দুর্ভোগ বাড়ে সাধারণ মানুষের। অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়ে প্রহর গোণে মুমূর্ষু রোগীরা। এই সমস্যা অবশ্য হাওড়ার অন্যত্রও। ময়দান থেকে কদমতলা যেতে পঞ্চাননতলা রোডের কাছে এই ধরনের যানজটে নাকাল হন নিত্যযাত্রীরা। কারণ এই রুটেও রাস্তার ধারে রয়েছে একাধিক বিয়েবাড়ি।
হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি ট্রাফিক (১) শেখর রাও বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে বুধবারই আলোচনা করেছি। যানজটের কারণও খুঁজে বের করা হয়েছে। আমরা রাস্তার ধারের বিয়েবাড়ির মালিকদের ডেকে কথা বলব। রাস্তার ধারে যাতে এভাবে গাড়ি পার্ক না করেন কেউ, সে কথা তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হবে। যাঁরা শোভাযাত্রা বের করছে এভাবে, প্রয়োজনে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলা হবে। সমস্যা দ্রুত মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.