শুভঙ্কর বসু: আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকছে রাজ্যের সমস্ত স্কুল। কলকাতা হাই কোর্টে দায়ের হওয়া একটি মামলার প্রেক্ষিতে সোমবার একথাই জানিয়ে দিল রাজ্য সরকার। বারো বছরের কম বয়সী শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তারা সহজেই এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত যাতে তাদের স্কুল না চালু করা হয় এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করুক রাজ্য সরকার। এমনই দাবি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে (kolkata high court) মামলা দায়ের করেছিলেন বিজেপি নেত্রী তথা আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল।
সোমবার বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। সেখানে রাজ্যের তরফে উপস্থিত আইনজীবীরা জানিয়ে দেন, ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত স্কুলগুলিকে বন্ধ রাখতে নির্দেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বক্তব্য শোনার পরই ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, রাজ্য যেহেতু ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তাই এই নিয়ে এখনই আদালতের হস্তক্ষেপের কোনও প্রয়োজন নেই। পুজোর ছুটির পর ফের মামলাটির শুনানি হবে।
সম্প্রতি ইউজিসি (UGC) -এর জারি করা নির্দেশিকার প্রেক্ষিতে রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি চালু করা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছিলেন, ‘৩১ অক্টোবর স্নাতকোত্তরে ফলপ্রকাশ। তারপরই পয়লা নভেম্বর থেকে ক্লাস শুরু করা সম্ভব নয়। সেই সময় ভরতি প্রক্রিয়া শুরু হবে। ১ ডিসেম্বরে স্নাতকোত্তরের ক্লাস শুরু হবে। তবে তা অনলাইনে। উৎসবেরই জন্য শিক্ষাবর্ষ পিছোচ্ছে।’ এছাড়াও স্নাতক স্তরে এখনই কলেজে শারীরিকভাবে উপস্থিতি সম্ভব নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
ইউজিসির জারি করা ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, ১ নভেম্বর থেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু করতে হবে। পাশাপাশি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভরতির সব প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ এবং ২০২১‐২২ শিক্ষাবর্ষের পঠনপাঠনের ক্ষতি আটকাতে প্রয়োজন হলে সপ্তাহে ৬ দিন ক্লাস নিতে হবে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে। কাটছাঁট করতে হবে এককালীন ছুটিগুলিকেও। সমস্ত রকম কোভিড বিধি মেনেই ক্লাস নিতে হবে।
অন্যদিকে ওই ডিভিশন বেঞ্চেই আমফান দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি মামলার আগামী শুনানিতে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের প্রধান সচিবকে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দিলেন বিচারপতিরা। এর আগে এই বিষয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। অথচ মাসখানেক ঘুরে গেলেও সেই রিপোর্ট জমা পড়েনি। সেই কারণে এবার বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর প্রধান সচিবকে আদালতে হাজির হয়ে কারণ ব্যাখ্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আমফানের ত্রাণ বন্টনের নামে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এই অভিযোগে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কৃষক সমিতি। এরপরই রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের প্রধান সচিব-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিল আদালত। নির্দেশ ছিল, দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা আকারে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। কিন্তু, প্রায় একমাস কেটে গেলেও রাজ্যের তরফে এ সংক্রান্ত কোনও রিপোর্ট এখনও আদালতে জমা পড়েনি।
সোমবার মামলাটি বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য উঠলে দেখা যায়, রিপোর্ট তো জমা পড়েইনি। উলটে রাজ্য সরকারের তরফে কোনও আইনজীবী শুনানিতে উপস্থিত নেই। এতেই রেগে যান বিচারপতিরা। এরপরই আগামী ৯ তারিখ বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের প্রধান সচিবকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে রিপোর্ট জমা না পড়ার কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয় বেঞ্চ। পাশাপাশি আদালত জানিয়ে দিয়েছে, ৮ তারিখের মধ্যে,মামলায় ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপযুক্ত কারণ উল্লেখ করে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। ৯ তারিখ ফের মামলার শুনানি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.