সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একের পর এক ফতোয়া জারি, বিতর্কিত মন্তব্য করে মুসলিম সমাজকে খেপিয়ে তোলা ও কেন্দ্রীয় আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গাড়িতে লালবাতি ব্যবহার করে বিতর্ক বাড়ানোয় টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম মৌলানা নূর-উর রহমান বরকতির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ল মসজিদ কর্তৃপক্ষ৷ বরকতিকে ইমামের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করল মসজিদের ট্রাস্টি বোর্ড৷ ইতিমধ্যেই বরকতিকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে বলে শনিবার জানানো হয়েছে৷ বরকতির বিরুদ্ধে নকল তালাকনামা বানানোর অভিযোগ রয়েছে৷
তবে আর একটি সূত্রের খবর, চলতি বছরের গোড়াতেই নাকি বহিষ্কারের চিঠি ধরানো হয় বরকতিকে৷ কিন্তু তিনি কার্যত গায়ের জোরে এখনও মসজিদে রয়েছেন৷ ক্ষমতার অপব্যবহার করে মসজিদের ভিতর বরকতি নানা অনৈতিক কাজ করে চলেছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে৷ এই পরিস্থিতিতে নয়া কেন্দ্রীয় সরকারের আইনকে কার্যত চ্যালেঞ্জ করে বরকতি জানিয়ে দেন, তিনি তাঁর গাড়ি থেকে লালবাতি খুলবেন না৷ অথচ চলতি মাস থেকেই দেশ জুড়ে নির্দিষ্ট কয়েকজন ভিভিআইপি ছাড়া কোনও গাড়িতে লালবাতি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মোদি সরকার৷ ‘বাবু কালচার’-এ রাশ টানতেই এই উদ্যোগ কেন্দ্রের৷ কিন্তু বরকতি হুঁশিয়ারি দেন, এ রাজ্যে কেন্দ্রের আইন চলে না। তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে গাড়িতে লালবাতি ব্যবহার করার অনুমতি পেয়েছেন। মোদির জন্য তিনি গাড়ি থেকে লালবাতি সরাবেন না।
এখানেই থেমে না থেকে কলকাতার ইমাম বরকতি আরও দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর লালবাতি লাগানো গাড়িতে চড়ার কথা জানেন। কিন্তু তিনি আপত্তি করেননি। কেন্দ্রের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে লালবাতি লাগানো গাড়িতে চড়ে ঘুরে বে়ড়ানোর জন্য বরকতিকে গ্রেপ্তার করার দাবি তোলে রাজ্য বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সম্পাদিকা লকেট চট্টোপাধ্যায় ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’-কে তাঁর একান্ত প্রতিক্রিয়ায় জানান, বিশেষ সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার জন্যই বরকতিকে ছাড় দিয়েছে রাজ্য সরকার। এর আগে বরকতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন, ভারত-বিরোধী বক্তব্য প্রকাশ্যে পেশ করেন বলে অভিযোগ করেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব কার্যত হুঙ্কার দিয়ে জানায়, প্রশাসন ও পুলিশ বরকতিকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে তাঁরাই ওই সংখ্যালঘু নেতাকে তুলে লালবাজারে দিয়ে আসবেন। ঘরে-বাইরে চাপ বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত অবশ্য শনিবার গাড়ি থেকে লালবাতি খুলে ফেলতে বাধ্য হন বরকতি৷
Kolkata: Shahi Imam of Tipu Sultan Masjid, Maulana Noor-ur Rehman Barkati who initially defied red beacon ban, removes it from his car. pic.twitter.com/2k2fB2guOO
— ANI (@ANI_news) May 13, 2017
টিপু সুলতান মসজিদ কর্তৃপক্ষ এই খবর জানিয়ে বলেছে, এই বিষয়ে বরকতি সাহেবের কোনও বক্তব্য নেই৷ তিনি নাকি অসুস্থ৷ এদিন সকালেই বরকতির সঙ্গে রাজ্য সরকারের এক প্রতিনিধি দল দেখা করে৷ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন বরকতির সঙ্গে৷ সেই বৈঠকের পরই টিপু সুলতান মসজিদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, ইমাম বরকতির গাড়ি থেকে লালবাতি খুলে ফেলা হয়েছে৷ শুক্রবার টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম নূর-উর রহমান বরকতির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয় তপসিয়ায়। এর মধ্যে ইমাম পদ থেকেও তাঁকে অপসারিত করায় দৃশ্যতই বেকায়দায় বরকতি৷ এদিনই বরকতিকে আরএসএস-এর এজেন্ট বলে দাবি করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি৷ তাঁর বক্তব্য, “বরকতিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.