ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: আমফানের ভয়াবহ স্মৃতি এখনও তাজা। কোনও প্রাণহানি না হলেও আতঙ্কে চিড়িয়াখানার পশু পাখিদের ঘুম হয়নি ঝড়ের রাতে। সারা রাত চিল চিৎকার করেছে পাখিগুলো। আর যেখানে সেখানে উপড়ে পড়েছে প্রাচীন গাছ। সৌভাগ্যক্রমে এক চুলের তফাতে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা মিলেছিল। সেই স্মৃতি থেকেই যশের জন্য আগাম সতর্কতা নেওয়া হল চিড়িয়াখানায়। পশু পাখিদের জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা থাকছেই। তার পাশাপাশি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে একটি ‘লিটিল আর্মি’ তৈরি থাকছে। ৩৫ জনের সেই দলে ডাক্তার থেকে সশস্ত্র রক্ষী থাকছেন সকলেই।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত খবর, বুধবার দুপুরের পরই যশ আছড়ে পড়তে পারে। তাই ওইদিন সকাল থেকেই আর কাউকে ঘরের বাইরে বের করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কোথায় কীভাবে থাকবে সবাই? বাঘ, সিংহ, লেপার্ড, জাগুয়াররা সকাল থেকেই নাইট শেল্টারে থাকবে। অর্থাৎ মঙ্গলবার রাত থেকেই সকলে ঘরবন্দি থাকবে। বিষাক্ত সরীসৃপ যেমন চন্দ্রবোড়া, গোখরো-সহ অ্যানাকোন্ডাও থাকবে কাঠের বাক্সে। হাতি যেমন রাতে শেল্টারে থাকে তেমনই থাকবে। সঙ্গে তাদের একটু বেঁধেও রাখতে হবে।
জিরাফ আর জেব্রা ভিজতে একেবারেই পছন্দ করে না। গায়ে জল লাগলেই ঘরমুখো। তবু মাঝেসাঝে জিরাফরা অদ্ভূত আচরণ করে। ঠায় দাঁড়িয়ে জলে ভিজে। আমফানের সময় সিসিটিভিতে চোখ রেখে তেমনটাই দেখেছিলেন আধিকারিকরা। একটা সময়ের পর ঠেলেও ঘরে ঢোকানো যায়নি। তবে হরিণ এসবের ধারকাছ দিয়েও যায় না। তারা ঝড় বৃষ্টিতে খোলা জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। এদের কথা ভেবে আশপাশের গাছের ডাল আগেই ছেঁটে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তবু যদি গাছ ভেঙে পড়ার ভয়ে তারা দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছোটাছুটি করে তার জন্য আলাদা নেটের ব্যবস্থাও থাকছে তাদের জন্য। জিরাফ এই মুহূর্তে রয়েছে ৯টি। তাদের তিনটি আলাদা খাঁচায় রাখার কথা বলা হয়েছে। জেব্রাদেরও আগে থেকে ঠেলেঠুলে হলেও ঘরে পাঠানো হবে।
আরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে পাখিদের জন্য। কাউকে আর নির্দিষ্ট এনক্লোজারে ছেড়ে রাখা হবে না। চেহারায় বড় পাখিদের ক্ষেত্রে প্রত্যেককে আলাদা করে খাঁচায় রেখে দেওয়া হবে। যাতে ভয়ে কেউ কারও ক্ষতি না করে ফেলে। ছোট পাখিদের ক্ষেত্রেও যতটা সম্ভব আলাদা ব্যবস্থা করা থাকবে। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিস সামন্তের কথায়, “আমফান আমাদের যে শিক্ষা দিয়ে গিয়েছে, তার থেকেই আমরা আগাম ব্যবস্থাপনা নিয়ে রেখেছি। এর পর ঝড়ের পরিস্থিতি দেখে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই গোটা প্রক্রিয়া ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, তার দেখভাল করতে ৩৫ জনের একটি দল তিনভাগে কাজ করবে। ফনির সময় থেকেই দলটি তৈরি হয়েছে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের সুরক্ষার কথা ভেবে। দলে রয়েছে পশুর কিপার অর্থাৎ যাঁরা দেখভাল করেন, চিকিৎসক আর হাসপাতাল কর্মী মিলিয়ে একটি ইউনিট, নিরাপত্তা রক্ষী, সশস্ত্র রক্ষী, ইলেকট্রিশিয়ান প্রমুখ। তিনটি দলের একটি থাকবে কার্নিভোরাস বা মাংসাশী প্রাণী ও জিরাফের ঘরের কাছে। একটি থাকবে সরীসৃপদের কাছে। একটি হাতিদের কাছে। প্রত্যেকের কাছে ওয়াকিটকি থাকবে। প্রয়োজনমতো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে নেবেন তাঁরা। এ ছাড়া চিড়িয়াখানার নিজস্ব গাছ কাটার যন্ত্র, জেনারেটর এসব তো থাকবেই। এই পরিস্থিতিতে কারও খাওয়ার নিয়মে কোনও বদল হচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.