রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: এক নিশ্বাসে চার কেজি মাংস উদরস্থ করা তাদের কাছে কোনও ব্যাপার নয়। ইদানিং তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ভিটামিন। আলিপুর চিড়িয়াখানার সেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বা সিংহ কিংবা লেপার্ড, সকলেই এখন দু’বেলা মাংসের সঙ্গে ভিটামিনও খাচ্ছে। করোনার আবহে ঘোরতর মাংসাশীদের মেনুতে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়তি মিনারেলস। তৃণভোজী বা পক্ষীকুলের খাদ্যতালিকাও সেভাবে বদলানো হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে করোনাদস্যুর হাত থেকে পশুপাখিদের বাঁচানো।
মার্কিন মুলুকের চিড়িয়াখানায় COVID-19 আক্রান্ত হয়েছিল বাঘিনি নাদিয়া। ট্রাম্পের দেশে দুই বেড়ালের শরীরেও মিলেছে নোভেল করোনা ভাইরাস। হংকংয়ে এক পোষ্য কুকুর করোনা পজিটিভ। এমন ‘রিভার্স জুনোসিস’-এর খবর বিশ্ব জুড়েই। এমতাবস্থায় আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ। আমেরিকায় বাঘিনির শরীরে ভাইরাস মেলার পর থেকেই তারা নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এবার বাঘ, সিংহ-সহ অন্য পশুপাখিদের খাওয়ানো হচ্ছে ভিটামিন। পশুদের সংস্পর্শে যাওয়া কর্মীদেরও নিয়মিত শরীরিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। এখানকার পশু-পখিরা যাতে কোনওমতেই নাদিয়ার মতো ‘রিভার্স জুনোসিস’-এর শিকার না হয়, সে ব্যাপারে সাবধানতায় বিন্দুমাত্র ঘাটতি রাখা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চিড়িয়াখানার কর্তারা।\
আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিস সামন্ত সোমবার জানালেন, “প্রতিদিন পশুপাখিদের থাকার জায়গায় জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। কিপাররা যাঁরা খাবার দিচ্ছেন বা খাঁচায় ঢুকছেন, তাঁরা মাস্ক ও গ্লাভস পরে থাকছেন। এছাড়া বাঘ, সিংহ-সহ অন্যান্য পশুদের ভিটামিন খাওয়ানো হচ্ছে।” যে কোনও ধরনের ভাইরাসের প্রতিরোধে মিনারেল অ্যান্ড ভিটামিন শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বস্তুত, চিড়িয়াখানায় পশুদের ভিটামিন খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত এখন খুবই দরকার বলে মনে করছেন বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট ডাঃ সিদ্ধার্থ জোয়ারদার। তাঁর কথায়, “এই সময় পশুদের ভিটামিন সি বা মাল্টি ভিটামিন দেওয়া হলে ভাল। এছাড়া, জিঙ্ক-ক্রোমিয়াম এগুলিও দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, অনেক মাংসাশী প্রাণী আছে। তাদেরও সাপ্লিমেন্টারি ফুড হিসাবে মিনারেলস, ফ্রুটস ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।” অতিরিক্ত সতর্কতা হিসাবে শারীরিক লক্ষণে কোনওরকম সন্দেহজনক কিছু ঠেকলে কি বাঘ বা সিংহ-সহ পশুপাখিদের লালারস পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। ডাঃ জোয়ারদারের বক্তব্য, WHO থেকে এরকম কোনও নির্দেশিকা আসেনি।
চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, বাঘ বা সিংহদের শরীরের তাপমাত্রা দেখার জন্য থার্মাল গান আনা হয়েছে চিড়িয়াখানায়। কিন্তু পশুদের শরীরের ঘন লোমের জন্য থার্মাল টেস্ট করাটা সমস্যার। তাই সাবেকি থার্মোমিটারের উপর ভরসা করতে হয়। এক্ষেত্রে পশুদের মলদ্বারে থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়ে থাকে। অধিকর্তা ডাঃ আশিস সামন্তর কথায়, “এখন চিকিৎসকরা প্রতিদিন নজর রাখছেন পশুদের উপর। সিসিটিভির মাধ্যমে বাঘ-সিংহ-লেপার্ড-জাগুয়ারদের আচরণ স্বাভাবিক রয়েছে কি না সেটা সব সময় দেখা হচ্ছে। কারও মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করলে তখনই বোঝা যায় শারীরিক সমস্যা রয়েছে।” চিড়িয়াখানায় ৪টি সিংহ, ৯টি বাঘ, ২টি জাগুয়ার, ৩টি লেপার্ড, ৪টি শিম্পাঞ্জি ও কয়েকটি জঙ্গল ক্যাট এবং ফিশিং ক্যাটের উপর বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.