রিংকি দাস ভট্টাচার্য: শহরের বুকে গড়ে উঠছে এক টুকরো রেনফরেস্ট। আর সেখানকার স্থায়ী আবাসিক হতে মে মাসেই কলকাতায় উড়ে আসছে চারটি অ্যানাকোন্ডা। রুপোলি পর্দায় তাদের ভয়াবহ কাণ্ডকারখানা হিমেল স্রোত বইয়ে দিয়েছে শিরদাঁড়া দিয়ে। চেয়ারের হাতল চেপে রুদ্ধশ্বাসে দৈত্যাকার সেই সাপ দেখেছে আট থেকে আশি। অ্যামাজন রেন ফরেস্টের বাসিন্দাদের স্বাগত জানাতে এখন তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানার অন্দরে। ভোট প্রক্রিয়া শেষ হতেই চারটি ইয়েলো অ্যানাকোন্ডাকে চেন্নাই থেকে উড়িয়ে আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত। বস্তুত, বছর দেড়েক আগে মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ব্যাঙ্ক থেকে অ্যানাকোন্ডাগুলিকে আনার পরিকল্পনার জানিয়েছিল আলিপুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু টেন্ডার ডেকেও ঠিকমতো সাড়া না মেলায় তাদের ঘর তৈরিতে অনেকটা সময় চলে যায়। “আধুনিক মানের এনক্লোজার তৈরি করার জন্যই এতটা সময় লেগে গেল।”– মন্তব্য আশিসবাবুর। এক টুকরো অ্যামাজন রেনফরেস্ট তৈরিতে খরচ হয়েছে ২০ লক্ষ টাকা। আপাতত রেপটাইল হাউসের ডান দিকের ফাঁকা জায়গায় অ্যানাকোন্ডার বাসগৃহ তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। কেমন হবে তাদের থাকার জায়গা? অধিকর্তার কথায়, চেন্নাইয়ের ‘দ্য ম্যাড্রাস ক্রোকোডাইল ব্যাঙ্ক ট্রাস্ট অ্যান্ড সেন্টার ফর হার্পিটোলজি’র কর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী, কংক্রিট, পাথর ও গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে অ্যানাকোন্ডার থাকার ঘর।
এমনিতে অ্যানাকোন্ডা অ্যামাজনের বৃষ্টিঅরণ্যে বসবাস করে। তাই মজবুত কাচ দিয়ে ঘেরা অ্যানাকোন্ডার বাসস্থানেও তৈরি করা হবে তেমন পরিবেশ। বাসস্থানের কিছুটা জায়গায় ভাল ভাবে রোদ পড়ার ব্যবস্থা রাখা হবে। কিছুটা জায়গা থাকবে ঘন অন্ধকার। মূলত গাছের ডাল দিয়ে ঘেরা থাকবে জায়গাটি। বাসার বেশির ভাগটাই থাকবে জলাশয়। বস্তুত তিনফুট গভীর এবং পাঁচ-সাত ফুট চওড়া জলাশয় তৈরি করা হয়েছে। “তবে বদ্ধ নয়, রোজই জল পরিষ্কার করা হবে। সেই জলে ছেড়ে দেওয়া হবে মাছ। জলের চারপাশে কৃত্রিমভাবে তৈরি হবে কাদা। অ্যানাকোন্ডারা নিজেরাই ওই মাছ শিকার করে নেবে। তবে মাছের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে ছোট ইঁদুরও তাদের খাবার তালিকায় রাখা হবে।”, জানিয়েছেন অধিকর্তা।
সর্প বিশেষজ্ঞদের কথায়, নিরক্ষীয় অঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ায় কলকাতায় পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বিশেষ অসুবিধা হবে না অ্যানাকোন্ডাগুলির। জলবায়ুগত পার্থক্য না থাকলেও কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চান না আলিপুরের কর্তারা। তাঁদের কথায়, গরম কমলেই আনা হবে তাদের। আপাতত যা ঠিক হয়েছে, বিমানে ক্রেটে করে আনা হবে চারটি অ্যানাকোন্ডাকে। তারপর সেগুলিকে বিশেষ তত্ত্বাবধানে রাখার পরই প্রকাশে্য আনা হবে। কিছুদিন আগে চেন্নাইয়ের ‘দ্য ম্যাড্রাস ক্রোকোডাইল ব্যাঙ্ক ট্রাস্ট অ্যান্ড সেন্টার ফর হার্পিটোলজি’ থেকে আলিপুরে ঘুরে গিয়েছেন সেখানকার অ্যান্ডাকোন্ডার দেখভালের দায়িত্বে থাকা অজয় কার্তিক। অ্যানাকোন্ডার থাকার জায়গা সরেজমিনে ঘুরে দেখার পাশাপাশি চিড়িয়াখানার সাপের কিপারদের নিয়ে দীর্ঘ ক্লাস করান তিনি। সেখানে খাদ্যাভ্যাস, স্বাচ্ছন্দ্য, অসুস্থতার লক্ষণ ইত্যাদি বুঝিয়ে বলেন। আবার আলিপুর চিড়িয়াখানার একটি টিমও মাদ্রাজে গিয়ে অ্যান্ডাকোন্ডা প্রতিপালনের প্রশিক্ষণও নিয়ে আসে। ঘর তৈরি। কর্মীদের প্রশিক্ষণও শেষ। এখন শুধু ভোট মেটার অপেক্ষা।
[জ্বালা যন্ত্রণা ছাড়া আগুনের ফুলকিতেই রং লাগবে শরীরে!]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.