স্টাফ রিপোর্টার, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: তিনি এখন প্রাক্তন আইএএস (IAS) এবং বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা। তবু তাঁকে নিয়েই ফের নয়া মোড় কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতে। অবসর নেওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা পার হতে না হতেই মঙ্গলবার আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Alapan Bandyopadhyay) শোকজের নোটিস পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিপর্যয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) পর্যালোচনা বৈঠকে তিনি কেন গরহাজির ছিলেন? তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে আলাপনবাবুকে। বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের উল্লেখ করে লিখিতভাবে তিনদিনের মধ্যে তাঁকে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রকের আন্ডার সেক্রেটারি আশিসকুমার সিং।
নবান্ন সূত্রে খবর, সঠিক সময়েই জবাবি চিঠি দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে পাঠাচ্ছেন আলাপনবাবু (Alapan Bandyopadhyay)। যাতে তিনি স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করবেন তাঁর যা দায়িত্ব ছিল, তা পালন করেছেন। কোনও অকর্তব্য করেননি। বস্তুত, এক্ষেত্রেও সংঘাত নয়, সতর্কভাবেই তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব দেবেন প্রাক্তন মুখ্যসচিব (Chief Secretory)।
চিঠিতে আলাপনবাবুর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, শুক্রবার কলাইকুণ্ডা প্রধানমন্ত্রীর রিভিউ বৈঠকে তিনি কেন উপস্থিত ছিলেন না? ওই বৈঠকে না থেকে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫১ (বি) ধারা ভঙ্গ করেছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আইন ভঙ্গ করার পরেও কেন আলাপনবাবুর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার পদক্ষেপ করবে না, তারও ব্যাখ্যা চেয়েছেন আশিসকুমার সিং (Ashish Kumar Singh)। যে ভাবে চিঠিতে অবসরপ্রাপ্ত এক আমলাকে আইনের ধারা উল্লেখ করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাতে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত যে এখনই থামবে না, বরং তা যে দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে, তেমনই ইঙ্গিত দেখছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহল।
প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, সোমবার পর্যন্ত আইএএস হিসাবে মুখ্যসচিব পদে চাকরি করার জন্য আলাপনবাবুকে(Alapan Bandyopadhyay) দিল্লিতে নর্থ ব্লকে রিপোর্ট করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছিল কেন্দ্রের কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রক। কিন্তু এখন তিনি অবসরপ্রাপ্ত আমলা। তাই কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণের তরফে চিঠি পাঠানো হয়নি। এবার আলাপনবাবুকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর থেকে। যা কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকেরই (Home Ministry) অধীন। রাজনৈতিক মহলের মতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ দফতর চিঠি পাঠিয়ে আলাপনবাবুর কৈফিয়ত তলব করার অর্থ, নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এখন এভাবেই রাজ্য সরকারের উপর চাপ তৈরি করতে চাইছে কেন্দ্র। যে রুল বুকের নিয়ম বা ধারা অনুযায়ী এতদিন আলাপনবাবুকে তলব করা হচ্ছিল বা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত, তিনি অবসর নিয়ে নেওয়ায় তা আর কার্যকর করা সম্ভব হবে না মনে করেই এবার একেবারে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন, ২০০৫-এর অধীনে তাঁর জবাব চাওয়া হয়েছে। যাতে উত্তর সন্তোষজনক না মনে করলে আলাপনবাবুর বিরুদ্ধে ওই আইনের সংস্থান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫১ (বি) ধারায় আলাপনবাবুকে এই শোকজ করার ফলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার রাস্তা খোলা রাখতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ, যে আইনের ধারা উল্লেখ করা হয়েছে, তার একটি বিশেষ অংশে বলা হচ্ছে, ‘যথাযথ অনুমতি বা আইনি যুক্তি ছাড়া, আইনের অধীনে তাঁর উপর আরোপিত দায়িত্ব সম্পাদনে কোনও কর্মকর্তার ব্যর্থতা অথবা এই সংক্রান্ত কোনও আইনি সংস্থান উপেক্ষা করা এবং তা ভঙ্গ করলে’ নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এই আইনে কেন্দ্র বা রাজ্যের দেওয়া নির্দেশ কোনও ব্যক্তি মানতে অস্বীকার করলে বিচার প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এক বছর পর্যন্ত কারাবাসের সাজা হতে পারে। পাশাপাশি জরিমানাও হতে পারে। নির্দেশ অমান্য করার কারণে যদি কোনও জীবনহানি ঘটে বা বিপজ্জনক পরিস্থিতি উদ্ভূত হয় সেক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের দু’বছর পর্যন্ত কারাবাসের সাজা হতে পারে। এমন একটি আইন প্রয়োগের আগাম উল্লেখ যে সংঘাত আরও তীব্র করবে, তেমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহলও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.