অর্ণব আইচ: মেয়ে বিমানকর্মী। তাই পাড়ার লোকেদের ধারণা, করোনা(Corona) হয়েছে মেয়ের। এই গুজবের জেরেই হেনস্তা করা হল তাঁর মাকে। লকডাউনের মধ্যেই ওই মহিলা বিমানকর্মীর মাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রি করতে রাজি হল না দোকানদার। এমনকী হেনস্তারও অভিযোগ উঠল প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে। দক্ষিণ কলকাতার ঠাকুরপুকুরে ঘটল এই ঘটনা।
ওই মহিলা বিমানকর্মীর অভিযোগ, প্রাথমিকভাবে পুলিশও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনাটি শোনামাত্রই এগিয়ে আসেন লালবাজারের কর্তারা। পুলিশকর্তারা ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলেন। ঠাকুরপুকুর থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়, থানার আধিকারিকরা যেন মা ও মেয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। তাঁদের সাহায্য করেন। এছাড়াও যাঁরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছেন, তাঁদের কাজে যদি কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে লালবাজার।
যে বিমান সংস্থায় ওই মহিলা কর্মী কাজ করেন, সেই সংস্থার এক কর্তা কলকাতা পুলিশকে অনুরোধ করেছে এই বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে। মঙ্গলবার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা জানান, তিনি এই ঘটনার বিষয়ে রিপোর্ট চেয়েছেন। যাঁরা সাধারণ মানুষের জন্য লড়াই করে চলেছেন, যদি কোনও কারণে কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন, তবে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকী যদি কোনও পুলিশ আধিকারিক বা পুলিশকর্মীর গাফিলতির প্রমাণ মেলে, তাঁর বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, তিনি নিজেই ওই মহিলার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্থানীয় থানার পুলিশ যাতে তাঁদের সাহায্য করে, সেই বিষয়ে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা বিমানকর্মী ও তাঁর মা ঠাকুরপুকুর এলাকার একটি অভিজাত আবাসনে থাকেন। যদিও কাজের কারণে মহিলাকে বেশিরভাগ সময়ই শহরের বাইরে ও বিদেশেও থাকতে হয়। মহিলা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, তাঁর কিছু প্রতিবেশীই গুজব ছড়ান, যে যেহেতু তিনি বিদেশে থাকেন, তাঁর করোনা হয়েছে। কয়েকজন তাঁর বাড়িতে এসে তাঁর মাকে হেনস্তা করতে শুরু করেন। ওই প্রতিবেশীরা বলেন, প্রৌঢ়ার শরীরেও করোনা ভাইরাস থাকতে পারে। লকডাউন শুরু হওয়ার আগে তিনি সোসাইটির মধ্যেই থাকা দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে যান। কিন্তু ওই দোকান তাঁকে জিনিস বিক্রি করতে রাজি হয়নি। প্রৌঢ়াকে সরাসরি বলা হয়, তাঁর ও তাঁর মেয়ে দু’জনের শরীরে করোনা থাকতে পারে। তাই তাঁকে অত্যাবশ্যক প্রয়োজনীয় দ্রব্যও বিক্রি করা যাবে না। কারণ, তাঁরা করোনা ছড়াচ্ছেন।
মা মেয়েকে বিষয়টি জানালে তিনি প্রায় আকাশ থেকে পড়েন। কারণ, ওই মহিলা বিমানকর্মীর দাবি, তিনি বিমানে কাজ করলেও তাঁর শরীরে করোনা নেই। অথচ কীভাবে এই ধরনের গুজব রটল? তিনি হতবাক। তিনি সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ করেছেন যে, তাঁরা যেন গুজবে কান না দেন। ওই মহিলা বিমানকর্মীর বক্তব্য অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে তাঁর সহকর্মী অর্থাৎ বিভিন্ন সংস্থার বিমানকর্মী ও তাঁদের পরিবারের লোকেরা এই একই সমস্যায় ভুগছেন। ডিউটি করার সময় বিমানকর্মীদের হেনস্তা হতে হচ্ছে।
ওই মহিলার দাবি, করোনা নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করে থাকেন। যে কোনও সাধারণ মানুষের থেকে যা অনেক বেশি। তাঁরা বিমানে বহু যাত্রীর সংস্পর্শে আসেন। তাঁদের মধ্যে কেউ করোনা আক্রান্ত, আবার কেউ বা নয়। তাঁরা যদি কোনও কারণে আক্রান্ত হন, তবে অবশ্যই হাসপাতালে যাবেন। আর যদি করোনার আঁচ মেলে, তবে সংস্থাই তাঁকে কাজ করতে দেবে না। ওই মহিলা বিমানকর্মী জানান, তিনি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, তাঁর শরীরে করোনা নেই। তাই করোনা নিয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন ওই মহিলা বিমানকর্মী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.