গৌতম ব্রহ্ম: রাজনৈতিক কর্মসূচি মাত্রই জনগণের যন্ত্রণা। সে ডান, বাম – যে কোনও রাজনৈতিক দলেরই হোক। রাস্তা বন্ধ, ঘুরপথে যাওয়া, পুলিশি প্রহরা – সবমিলিয়ে আসল ভোগান্তি হয় রাস্তায় বেরনো আমজনতার। রেহাই পান না বিপন্ন রোগীরাও। মঙ্গলবার বিজেপির নবান্ন অভিযানের (Nabanna Abhijan) দিনও সেই পরিস্থিতির ব্যতিক্রম হল না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গের গেরুয়া শিবিরের রাজ্যের প্রশাসনিক ঘেরাও কর্মসূচির মাঝে পড়ে নাকাল হলেন রোগীরাও। তাঁদের একজন দেউলটির প্রসেনজিৎ দাস। নবান্ন অভিযানের নানা টুকরো ছবির মধ্যে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ চোখে পড়লেন তিনি।
যুবক প্রসেনজিৎ দাস দেউলটির (Deulti) বাসিন্দা। জটিল এক রোগে আক্রান্ত তিনি। তাঁর প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়। সেই সংক্রান্ত চিকিৎসা করানোর জন্য তাঁকে নিয়মিত আসতে হয় গার্ডেনরিচের রেল হাসপাতালে। ১৩ তারিখ অর্থাৎ আজ, মঙ্গলবার প্রসেনজিতের মেডিক্যাল চেকআপের কথা ছিল। সেইমতো ভোরবেলা দেউলটি থেকে বেরিয়ে তিনি ট্রেনে করে আসেন সাঁতরাগাছি। এরপর সড়কপথে গার্ডেনরিচ পৌঁছনোর কথা ছিল তাঁর। প্রতিবার যেভাবে আসেন, সেভাবেই এবারও হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ। সঙ্গে ছিলেন বন্ধু চন্দন বেরা। তাঁর সূত্রেই গার্ডেনরিচের রেল হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন প্রসেনজিৎ।
কিন্তু আজকের দিনটা তো অন্য দিনগুলোর মতো নয়। এদিন দুর্নীতির প্রতিবাদে বিজেপির নবান্ন অভিযান। সকাল থেকেই হাওড়া, কলকাতা সংযোগকারী রাস্তাগুলিতে যান নিয়ন্ত্রণ, পুলিশি প্রহরা এবং সর্বাপেক্ষা বিক্ষোভকারীদের ভিড়। সাঁতরাগাছি থেকে প্রসেনজিৎ যে অটোয় উঠেছিলেন, তা টোল প্লাজার বহু আগেই তাঁকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। কারণ, তার বেশি যাওয়ার অনুমতি নেই অটোর। নেমে তো গেলেন। কিন্তু এরপর যাবেন কীভাবে? টোল প্লাজা যে হু হু ফাঁকা। কোনও যানই চোখে পড়ে না।
প্রসেনজিৎ তবু ফিরে যাওয়ার পাত্র নন। ডাক্তার তো দেখাতেই হবে। সঙ্গে মেডিক্যাল রিপোর্ট, সঙ্গী চন্দন। এই নিয়েই হাঁটতে শুরু করেন প্রসেনজিৎ। গোটা দ্বিতীয় হুগলি সেতু পেরলেন হাঁটতে হাঁটতেই। তারপর রেলিং টপকে নামলেন রাস্তায়। মিছিলের পথ, অলিগলি পেরিয়ে তবেই তিনি পৌঁছন গার্ডেনরিচে। অসুস্থ প্রসেনজিতের এই রক্ত-ঘাম ভেজা পরিশ্রমের কাহিনি কি জানেন শুভেন্দু-দিলীপরা?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.