অর্ণব আইচ: বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র বিলি শুরু হয়ে গিয়েছে। ভাড়া করা হয়েছে বিয়ের হল। তৈরি ক্যাটেরার। মানসিক ভাবে পাত্রীও তৈরি নতুন ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে। কারণ, পাত্রের আশীর্বাদও হয়ে গিয়েছে দিন কয়েক আগে। তারপরই ঘটল অঘটন। পাত্রীর পরিবারের কাছে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে বিয়ে স্থির করায় গ্রেপ্তার যুবক।
দিন কয়েক আগেও তরুণী জানতেন না যে, ধেয়ে আসছে কালো মেঘ। পাত্রের আচরণে সন্দেহ হতে শুরু করেছিল পাত্রীর পরিবারের। পাত্রীর স্বপ্ন চুরমার হল যখন তাঁর বাড়ির লোকেরা পাত্রকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন নিউ টাউনের বহুজাতিক সংস্থাটির সামনে। পাত্র যে ওই সংস্থায় চাকরি করে, তার প্রমাণ দিলেই হবে। কিন্তু বহুজাতিক সংস্থার বহুতলের সামনে দাঁড়িয়েই ভেঙে পড়ে সে। সোজাসুজি স্বীকার করে যে, তার অফিস, ফ্ল্যাট কোনওটিই সত্যি নয়। ওই সংস্থায় কোনও দিনই চাকরি করেনি সে। এমনকী, গত ৬ মাস ধরে সে কোনও চাকরিই করে না। মঙ্গলবার এই ঘটনার পর আকাশ ভেঙে পড়ে পাত্রীপক্ষের মাথায়। তাঁরা দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পাত্র ও তার পরিবারের আরও ৩ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা শুরু হয়েছে। শুভদীপ ভাওয়াল নামে ওই ‘পাত্র’কে পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, একটি বিয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই ওই যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণীর পরিবারের। তারই মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানা যায় যে, যুবকের বাড়ি নদিয়ায়। যুবক ও তার পরিবার জানায়, সে নিউ টাউনের একটি নামী বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি করে। চিনার পার্কের কাছে তার ফ্ল্যাট তৈরি। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে সেখানেই থাকবে সে। পরিবারটির কথায় বিশ্বাস করেন পাত্রীর পরিজনরা। সেইমতো দু’পক্ষের কথা এগোয়। পাত্রীর বাড়ি থেকে বিয়ের পুরো ব্যবস্থা করা হয়। পাত্রীকে সাজানোর জন্য শাড়ি, সোনার গয়নাও কিনে আনা হয়। কিন্তু বাড়ির মেয়ে যে ফ্ল্যাটে ভবিষ্যতে ঘরকন্না করবে, সেই ফ্ল্যাটটি দেখতে চাইলে বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে থাকে সে। ক্রমে পাত্রী নিজেই জোর করলে একটি আবাসনের ভিতর ফাঁকা ফ্ল্যাটে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সঙ্গে একজন দালালকে দেখে পাত্রীর খটকা লাগে। তিনি বাড়ি গিয়ে বিষয়টি অভিভাবকদের বলেন। তবুও তিনি ‘হবু স্বামী’কে অবিশ্বাস করতে চাননি।
পরে নিউ টাউনের ওই বহুজাতিক সংস্থায় গিয়ে পাত্রীপক্ষ খোঁজখবর নেয়। কিন্তু ওই নামে কেউ সংস্থায় কাজ করে, তার প্রমাণ মেলেনি। পাত্রীপক্ষ দোটানায় পড়ে যান। এর মধ্যেই পাত্রর আশীর্বাদও হয়ে যায়। কিন্তু তার পরও খটকা দূর করতে পাত্রীর অভিভাবকরা উঠেপড়ে লাগেন। তাঁরা অনেকটা জোর করেই যুবকটিকে নিয়ে যান নিউ টাউনের ওই অফিসের সামনে। সেখানে যাওয়ার পরই ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। তাঁরা যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। যুবকের বাড়ির লোকেরা পাত্রীর পরিজনদের কাছে দাবি করেছেন যে, তাঁরা কিছুই জানতেন না। বাকি অভিযুক্তদের জেরা করা হবে। পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.