দীপঙ্কর মণ্ডল ও ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বেতনবৃদ্ধি-সহ একাধিক দাবিতে সোমবার প্রাথমিক শিক্ষকদের বিধানসভা ঘেরাও কর্মসূচি ঘিরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠল৷ উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এর নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ মিছিল সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে রানি রাসমণি রোড পর্যন্ত যায়৷ বিক্ষোভে হাজারেরও বেশি প্রাথমিক শিক্ষক অংশ নিয়েছিলেন।সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে বিধানসভার গেটের বাইরেও বিক্ষোভ দেখান তাঁরা৷ ব্যারিকেড ভেঙে বিধানসভার ভিতরে তাঁরা প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়৷ এমনকী জলকামান ছুঁড়ে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করা হয় পুলিশের তরফে৷ পিআরটি স্কেল লাগু, অন্য রাজ্যের সমান বেতন কাঠামো-সহ একাধিক দাবিতে সোমবার বিধানসভা ঘেরাও করেন প্রাথমিকের একদল শিক্ষক৷ তাতেই এমন ধুন্ধুমার৷ কয়েকজনকে আটকও করে পুলিশ৷
তবে আইনি জটিলতা কাটিয়ে দ্রুতই স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করতে চায় সরকার। সপ্তাহের শুরুতেই বিধানসভার অধিবেশনে জানিয়ে দিলেন স্কুল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুরুতে উচ্চ প্রাথমিক, এবং পরে মাধ্যমিক স্তরের সব নিয়োগের ক্ষেত্রেই এমন ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে আবেদনকারীরা আদালতে চলে যাচ্ছিলেন। সে কারণেই শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তায় ইন্টার্ন নিয়োগের ভাবনা মাথায় আসে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। সোমবার বিধানসভার অধিবেশনের শুরুর দিনেই ছিল শিক্ষা দপ্তরের প্রশ্নোত্তর পর্ব। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী সরাসরি কটাক্ষের তির ছুঁড়ে দেন। বলেন, “বাম আমলে সরকার সংগঠিত হোক বা অসংগঠিত, যেভাবে পেরেছে, নিয়োগ করেছে। আমরা নিয়মের গণ্ডিতে বেঁধে কাজ করতে চাই। আবেদনকারীরা যখন তখন আদালতে চলে যাচ্ছিলেন। শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজনেই একসময় ইন্টার্নের কথা ভাবা হয়েছিল। তবে এখনও তা আলোচনা স্তরে।”
এরপরই শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দেন, জুলাই মাসের মধ্যে সমস্ত শূন্যপদ পূরণের কথা। বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি। আশা করছি নতুন করে কেউ কোনও সমস্যা তৈরি না করলে, কোনও জটিলতা না থাকলে সব শূন্যপদ জুলাই মাসের মধ্যে পূর্ণ করা হবে।” ২০১৪ থেকে ২০১৮—১৯ পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগের হিসাবও দাখিল করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। সেই পরিসংখ্যান যে চলমান তাও জানিয়েছেন। বিরোধিতা করেছেন কংগ্রেসের অসিত মিত্র। বলেছেন, বহু জায়গায় শিক্ষক নেই। সুজন চক্রবর্তীও আবার আদালতে মামলার জন্য শিক্ষক নিয়োগ আটকে তা বিশ্বাস করতে চাননি। তাঁর প্রশ্ন, “যদি টেট ঠিক মতো হয়ে থাকে, তবে আদালতে কেন যেতে হবে? সরকার ঠিকমতো প্যানেল কেন করছে না?” এ প্রসঙ্গে বেনিয়মের অভিযোগ তোলেন তিনি।
দাবি নস্যাৎ করে পালটা শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “একটি সংস্থা অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। আমার কাছে অভিযোগ এলেও আমি ওই সংস্থার কাছে তা পাঠিয়ে দিচ্ছি। পুরনো নিয়মে দীর্ঘসূত্রিতার জন্যই জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রক্রিয়া সরলীকরণ করার চেষ্টা করছি।” এ প্রসঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে স্কুলে ছাত্রছাত্রীর অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগও বেশি হয়েছে বলে পরিসংখ্যান দেন শিক্ষামন্ত্রী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.