ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: লকডাউন পর্বের প্রথমে ধরা পড়েছিল বেশ কিছু চমকে দেওয়া ছবি। পাঞ্জাবের কাছাকাছি কোনও জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পড়ছে বাঘ। দক্ষিণের সমুদ্র ঘেঁষা এক রাজ্যের ফাঁকা সমুদ্রতটে চলে আসছে হাতির দল। কখনও আবার ঘোড়া কিংবা হরিণের দেখাও মিলেছিল। লকডাউন ওঠার মুখে সেই প্রাণীজগতই এখন কিছুটা অভিশাপের মুখে। দুদিন আগেই হায়দরাবাদের চিড়িয়াখানার এক লেপার্ড রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে গাড়ির ধাক্কায় জখম হয়। ফলে ক্রমশ চিন্তা বাড়ছে বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের।
গত দু’মাসে একাধিক বন্যপ্রাণীর দেখা মিলেছে লোকালয়ে। পরপর বেশ কিছু ফেসবুক পোস্ট বা বেশ কিছু জায়গার ছবিতে ক’দিন ধরে ঘুরেছে সেসব। কোথাও দেখা মিলেছে গন্ধগোকুল, কোথাও খটাস। কোথাও পরপর ধরা পড়েছে মেছো বেড়াল। এমনকী, গঙ্গাতেও দেখা মিলেছে হারিয়ে যাওয়া শুশুকের। প্রশ্ন উঠতে পারে হঠাৎ কীভাবে দেখা মিলেছে এদের? এরা কি এতদিন অন্য কোথাও ছিল? আলিপুর চিড়িয়াখানার প্রাক্তন পশু চিকিৎসক ডা. স্বপন ঘোষ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “লকডাউনের প্রথম পর্বে এলাকা একেবারে জনশূন্য ছিল। তাই রাস্তা ফাঁকা পেয়ে পশুপাখিরাও বেরিয়ে পড়ার সাহস করেছে।” তবে আগে যে একেবারেই এরা আসত না তেমন নয়। স্বপনবাবুর কথায়, “আমাদের হাতেও এখন অঢেল সময়। তাই এদের দিকে নজর যাচ্ছে। হরবোলা নানা পাখিও চোখে পড়ে মনে হয়েছে আচমকা সব কথা থেকে যেন চলে এসেছে। কিন্তু এরা সবাই ছিলই।” তবে লকডাউন খুলে দিলে কী হবে? আশঙ্কা প্রকাশ করে স্বপনবাবু বলেন, “প্রথম দিকে সমস্যা তো হবেই। গাড়ির ধাক্কা খাবে। জখম হওয়ারও খবর আসবে। রাতের অন্ধকারে একেবারে চাপাও পরে যেতে পারে। তবে যে কোনও চারপেয়ে প্রাণীর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অত্যন্ত প্রখর। তাই রাস্তায় গাড়ি চলতে দেখলে ওরা আবার পুরোনো অভ্যাসেই ফিরে যাবে।”
কিন্তু এখন একেবারে দুঃসাহসী হয়ে বন্যপ্রাণীদের রাস্তায় নেমে পড়ার কারণ কী? বেলগাছিয়া প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পশু চিকিৎসক ডা. গৌতম সরখেলের কথায়, “কুকুর বেড়ালের ক্ষেত্রে প্রথম কারণই হল ক্ষুধা। চট করে লোকালয়ে সারমেয়রা উচ্ছিষ্ট পাচ্ছে না বলেই রাস্তায় নেমে পড়ছে। বাড়িতেও এখন কেউ খাবার নষ্ট করছে না। ফলে তাদের ছুটে বেড়াতে হচ্ছে।”আর জঙ্গলের বাঘ, লেপার্ড, হাতি এদের ক্ষেত্রে? তাদেরও তো মাঝেমধ্যেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে অবাধ বিচরণ করতে দেখা যাচ্ছে! বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংস্থা ‘শের’–এর সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ কুণ্ডু বলছেন, “সময়টা যথেষ্ট আশঙ্কার। বিষয়টা শর্ট টার্ম মেমোরির মতো। এখন অনেক জঙ্গলের পাশ থেকে বা ভিতর দিয়ে হাইওয়ে হয়েছে। তাতে তো এমনিতেই বিপদ বেড়েছে। তার উপরে লকডাউনে গাড়ির দেখা নেই রাস্তায়। তাই সেখানে এসে বসে থাকছে। ওরা লকডাউন সম্পর্কে কিছুই বোঝে না। তাই আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে গেলে বন্যপ্রাণীদের কিছুটা ক্ষতি তো হবেই। এমনকী নদীতে আবার শুশুকদের দেখা না ও মিলতে পারে।” তবে বন্যদের বনে সুন্দর থাকার জন্য একটি সময় দিতে হবে বলে মত বন্যপ্রেমীদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.