গৌতম ব্রহ্ম: পুরসভার দোরে হত্যে দেওয়ার দিন শেষ। সরকারি হাসপাতালে জন্ম হওয়া শিশুর বার্থ সার্টিফেকেট ইস্যু করে দিচ্ছে হাসপাতালই। আর তার জেরে যেন সেখানে বাস্তবায়িত হয়ে উঠেছে বহুশ্রুত এক পৌরাণিক প্রবচন। আক্ষরিক অর্থেই রাম জন্মানোর আগে লেখা হয়ে যাচ্ছে শয়ে শয়ে রামায়ণ। একটু ভুল হল। ‘লেখা’ নয়, ভেবে রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রসূতির পরিবারকে জানিয়ে দিচ্ছে, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তার কম্পিউটারাইজড বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। অতএব, শিশুর নাম কী হবে ভেবে রাখুন।
কিন্তু ছেলের নাম ঠিক করা হবে না মেয়ের? সেটা তো আগাম জানা সম্ভব নয়। কাজেই দু’রকম নামই ভেবে নিয়ে সূতিকাগারের দরজার সামনে দাঁড়াচ্ছেন বাড়ির লোক। প্রসব হওয়ার পর সেই নামে সদ্যজাতের জন্ম শংসাপত্র ইস্যু হয়ে যাচ্ছে। ‘বেবি অফ এক্স’ এখন অতীত। সরকারি হাসপাতাল থেকেই মিলছে পূর্ণাঙ্গ বার্থ সার্টিফিকেট, জানাচ্ছেন পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সন্দীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘সন্তান জন্মের পর ছুটির আগে প্রসূতিদের হাতে তা তুলে দেওয়া হচ্ছে। পুরসভার বরো অফিসে যাওয়ার দরকার নেই।’
৫ মার্চ ন্যাশনালের স্ত্রী রোগ বিভাগে প্রকল্পটি চালু হয়েছে। দৈনিক গড়ে ১২ থেকে ১৩টি সার্টিফিকেট ইস্যু হচ্ছে। সন্দীপবাবুর দাবি, ন্যাশনালই প্রথম সরকারি হাসপাতাল যারা কম্পিউটারাইজড বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়ার কাজ শুরু করল। একই বক্তব্য ন্যাশনালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সাংসদ ডা. শান্তনু সেনের। তাঁর বক্তব্য, জন্মের কয়েক মাস পর সন্তানের নাম ঠিক করে বরো অফিসে গিয়ে বার্থ সার্টিফিকেট হয়। এটাই নিয়ম। কিন্তু ন্যাশনালে যে শিশুরা ভূমিষ্ঠ হচ্ছে তাদের বাবা-মায়েদের বার্থ সার্টিফিকেটের জন্য কোথাও যেতে হবে না। লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এটা স্বাস্থ্য দফতরের দারুণ উদ্যোগ। আশা করছি, অন্য সরকারি হাসপাতালেও চালু হবে এই প্রকল্প। ন্যাশনালের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান ডা. আরতি বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘নর্মাল ডেলিভারির পর প্রসূতিদের ৪৮ ঘণ্টা হাসপাতালে রাখা হয়। সিজার হলে সাত দিন। আগে থেকে নাম ভেবে রাখলে সুবিধা। অনেকে একটু বেশি সময় নেন৷’
[নিজের নামের পার্কেই বানান বিভ্রাট, রেহাই পেলেন না সত্যজিৎ রায়ও]
নতুন এই ব্যবস্থায় অবশ্য প্রসূতিরা খুশি। যাদবপুরের সোমা দাস দ্বিতীয়বারের জন্য মা হয়েছেন। প্রথমবার মেয়ে। দ্বিতীয়বার ছেলে। মেয়ের বার্থ সার্টিফিকেট পেতে তিন দিন বরো অফিসে যেতে হয়েছিল। সকাল থেকে দিতে হয়েছিল লম্বা লাইন। আর এবার ডিসচার্জ সার্টিফিকেটের সঙ্গেই পেয়ে গিয়েছেন ছেলের বার্থ সার্টিফিকেট। দু’-একজন অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, শিশুর নাম সবাই একটু আলোচনা করে রাখে। আর একটু বেশি সময় পেলে ভাল হত। তবে, হাতে গরম বার্থ সার্টিফিকেটের ব্যবস্থায় সবাই খুশি। স্বাস্থ্যকর্তাদেরও ধারণা, ধীরে ধীরে সবাই অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আরতিদেবী জানালেন, হয়রানি কমাতেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করতে গেলে এই বার্থ সার্টিফিকেট প্রয়োজন। রাতারাতি স্ত্রীরোগ বিভাগের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ল্যান সংযোগ নিয়ে আলাদা ডেস্ক চালু করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.