অভিরূপ দাস: রেকর্ড গিয়ে ক্যাসেট এসেছিল বছর পঁয়ত্রিশ আগে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ক্যাসেট বদলে গিয়েছিল সিডিতে। এখন পুজোর গান মানে ইউটিউব সিঙ্গলস। শিল্পীরা বলছেন, সেদিনও পুরনো হবে শিগগিরি। কিছু বছর পর পুজোয় গান গাইবে রোবট।
ইতিমধ্যেই তা সত্যি হয়েছে লন্ডনে। লন্ডনের এক সংস্থা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে বানিয়েছে যন্ত্রমানব ‘ইয়োনা’। সম্পর্ক এবং একাকিত্ব নিয়ে গান গেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। এ বাংলাতেও সেদিন আর বেশি দূরে নেই। গায়ক সৈকত মিত্রর কথায়, ”এখন একজন বেসুরো গাইলে যন্ত্রের দ্বারা ঠিক করা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্রমশ যে জায়গায় পৌছচ্ছে, তাতে এখনই সুর তৈরি করাই যায়। এর পর সেখানে কথা বসিয়ে দিলে কাজ শেষ। সে দিন কেমন হবে তা আন্দাজ করতে পারছেন না অনেকেই।” শিলাজিৎ মজুমদারের কথায়, ”কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সে যুগে কিছু লোক কাজ হারাতে পারে। কিছু লোক আবার নতুন কাজ পেতে পারে।” তবে একটা বিষয়ে নিশ্চিত শিলাজিৎ, ‘‘মানুষকে এখন যত খাটতে হয়, তত খাটতে হবে না।’’
চল্লিশ বছর আগের তৈরি পুজোর গান এখনও বাজে মণ্ডপে। কান পাতলেই শোনা যায় শ্যামল মিত্রর ‘কী নামে ডেকে’ কিংবা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘কতদিন পরে এলে’। এখন যে গান তৈরি হচ্ছে তাকে শোনা যাবে চল্লিশ বছর পরে? শ্যামল মিত্রর পুত্রের কথায়, ‘‘না শোনার সম্ভাবনাই বেশি।’’ শিল্পী জানিয়েছেন, সারা বছরই এখন গান রিলিজ করছে। পুজো এলে দারুণ কিছু গান আসবে- এই চিন্তা থেকেই মানুষ সরে এসেছে।
অতিরিক্ত গান গাইতে গিয়েই এই সার্বিকভাবে ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন শিল্পীদের একাংশ। পুরনো রেকর্ডে দুই পিঠে দুটো গান থাকত। সোনাঝরা সেসব দিনে মুখিয়ে থাকতেন শ্রোতারা। কালের নিয়মে মুছে যায় রেকর্ড। ক্যাসেটে আর দুটো নয়। দু’পিঠে দশটা করে গান। সৈকত মিত্রর পুত্রের আফসোস, ‘‘বিজ্ঞানের নিয়মে গানের পরিমাণ বেড়েছে, কমেছে গুণমান। সারা জীবনে একজন শিল্পী পাঁচটা ভালো গান তৈরি করতে পারে না। সেখানে একটা ক্যাসেটের জন্য যদি চটজলদি দশ-বারোটা গান তৈরি করতে হয় তা হলে বিষয়টা তো নিম্নগামী হবেই।’’
পুরনো যুগ নিয়ে মাতামাতি করতে নারাজ শিলাজিৎ। তাঁর কথায়, ওটা যদি স্বর্ণযুগ হয়ে থাকে তবে এটা প্ল্যাটিনাম। এখন যেটা চলছে তাতে খারাপ কিছু হয়নি। ইউটিউব মাধ্যমটা ভীষণ গণতান্ত্রিক। আগে পুজোর ক্যাসেট করার জন্য কোম্পানির দরজায় দরজার ঘুরতে হত। এখন নতুন একজন গায়ক চাইলেই একটা পুজোর গান গেয়ে ইউটিউবে আপলোড করতে পারেন। সে গানের শ্রোতা কতজন? হেমন্তর ‘কত দিন পরে এলে’-এর মতো চার দশক ধরে টিকবে তো? শিলাজিতের কথায়, ”তোমার যদি প্রোডাক্টের দম থাকে, তোমার জনপ্রিয়তা থাকে তা হলে ঠেকানো যাবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.