ফাইল ছবি
গৌতম ব্রহ্ম ও অভিরূপ দাস: চোদ্দো পুরুষের ভিটে এক নিমেষে ধুলো। তিনতলার বসার ঘর, গোলবারান্দা চোখের সামনে গ্রাউন্ড জিরো। তিনদিন আগেও যা ছিল স্থায়ী ঠিকানা, আজ তা ইট-কাঠের ধ্বংসস্তূপ। এমনটা মেনে নিতে পারছেন না বউবাজারের বাসিন্দারা। মুহুর্মুহু জ্ঞান হারাচ্ছেন। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে ভরসা রাখছেন কড়া ঘুমের ওষুধে।
বউবাজারে পাতালপথে মেট্রোর কাজের জন্য তাসের ঘর উত্তর কলকাতার স্যাকরাপাড়া, দুর্গা পিতুরি। এর মধ্যেই গোটা পাঁচেক বাড়ি মিশে গিয়েছে মাটির সঙ্গে। আটষট্টিটা যে কোনও দিন পড়ে যাবে। হোটেলে মাথা গুঁজলেও মন ভাল নেই ভিটেহারাদের। কেউ থম মেরে গিয়েছেন, কেউ বিড়বিড় করছেন একটানা। যা শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির অধিকর্তা ডা. প্রদীপ সাহা। তিনি জানিয়েছেন, যেভাবে বউবাজারে মানুষ চোখের সামনে প্রিয় বাসস্থানকে ভেঙে পড়তে দেখছেন, তা অত্যন্ত মানসিক যন্ত্রণাদায়ক। অনেকেই স্নায়ুর ভারসাম্য হারিয়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলছেন। যাঁরা মানসিক চাপ নিতে পারছেন না তাঁদের অবিলম্বে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যেতে হবে। কাউন্সেলিং করাতে হবে।
বউবাজারের বাসিন্দাদের অসুখের সঙ্গে জাপানের সাদৃশ্য দেখছেন চিকিৎসকরা। ডা. সাহাও জানিয়েছেন, জাপানে এমন অসুখ দেখা যায়। প্রতি বছর সে দেশে দেড় হাজারেরও বেশি ছোট-বড় ভূমিকম্প হয়। একের পর এক বাড়ি ভেঙে পড়ে। চোখের সামনে নিজের বাড়ি ভেঙে পড়তে দেখে পোস্ট ট্রমাটিক ডিজঅর্ডারে ভোগেন জাপানের বাসিন্দারা। বউবাজারে এবার সেই রোগেরই ছায়া।
ডা. সাহার কথায়, এমন অসুখকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে নিউরোলজিক্যাল মিসম্যাচ। অন্তঃকর্ণ এবং চোখ এবং পায়ে অনুভূতি বহনকারী স্নায়ুগুলি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। যাঁরা চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটতে দেখছেন তাঁদের মধ্যে মোশন সিকনেস তৈরি হতে পারে। কারও অ্যালার্জিও দেখা দিতে পারে। ত্রিশ-চল্লিশ বছর ধরে এক বাড়িতে বাস। আচমকাই সেটি ভেঙে পড়ে গেল। এতে একধরনের ট্রমা তৈরি হয়। কাউন্সেলিং না করালে এই ট্রমা দীর্ঘদিন জাঁকিয়ে বসতে পারে রোগীর শরীরে। এই ধরনের পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার কয়েক সপ্তাহ বা মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। এতে ‘অ্যান্টি অ্যাংজাইটি’ বা অ্যান্টি ডিপ্রেশনের ওষুধ খেতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন। বিশেষ করে যাঁরা এই ঘটনার পর অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। জ্বর আসছে অথবা বমি হচ্ছে, গা গুলোচ্ছে। সত্বর তাঁদের কাউন্সেলিং প্রয়োজন বলে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.