নিরুফা খাতুন: বাঘ, সিংহ, হাতি। যেটা পছন্দ, পাবেন। চাইলে অ্যানাকোন্ডা, জিরাফ, জেব্রা, শিম্পাঞ্জিও মিলবে। দেবে আলিপুর চিড়িয়াখানা। তবে বিক্রি নয়, দত্তক হিসাবে। পালনপোষণের টাকা জোগালে চিড়িয়াখানার পছন্দের পশুপাখিকে দত্তক নেওয়ার সুযোগ অবশ্য চালু হয়েছে অনেকদিন। কিন্তু এ যাবৎ চুক্তি হত এক বছরের, সে টাকার অঙ্কটা কম নয়। ফলে আগ্রহে ভাটা পড়েছিল, অনেকেই চুক্তি পুনর্নবীকরণ করছিলেন না। কর্তৃপক্ষের দাবি, দত্তকের ব্যয়বহনের মাসিক চুক্তি চালু করে সমস্যার সুরাহা হয়েছে, আবেদনের ঢল নেমেছে। উপরন্তু অনলাইন দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় আগ্রহ আরও বেড়েছে। এহেন সাড়া দেখে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ খুশি।
তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত চিড়িয়াখানার মোট ৬১টি আবাসিক পশুপাখিকে দত্তক দেওয়া হয়েছে, যা কি না রেকর্ড। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্তের কথায়, “গত বছর নতুন করে দত্তক প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। বার্ষিক চুক্তির পাশাপাশি মাসিক চুক্তির ব্যবস্থায় ভাল সাড়া মিলছে। স্কুল, কলেজের পড়ুয়ারাও এগিয়ে আসছেন।” অধিকর্তা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৬১টি পশুপাখিকে দত্তক দেওয়া হয়েছে, যার ১২টির জন্য মাসিক চুক্তি বলবৎ। এবং দত্তক দিয়ে এই এক বছরে চিড়িয়াখানা কোষাগারে এসেছে প্রায় ৯ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা।
চিড়িয়াখানার পশু-পাখিকে দত্তক নিয়ে অবশ্য বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যায় না। সে যথারীতি চিড়িয়াখানার খাঁচাতেই থাকে, খাঁচার সামনে অভিভাবককের নাম লেখা একটি বোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়, অভিভাবক কর্তৃপক্ষের তরফে পান একটি সার্টিফিকেট। দত্তকদের সঙ্গে দেখা করার জন্য অভিভাবক-সহ চারজনকে কমপ্লিমেন্টারি পাস দেওয়া হয়। চাইলে ‘দত্তক সন্তানের’ সঙ্গে জন্মদিন কিংবা বিশেষ কোনও দিন উদযাপনের সুযোগও মজুত।’
আলিপুর চিড়িয়াখানায় দত্তক প্রথার সূচনা সাত বছর আগে, ২০১৫ সালে। চিড়িয়াখানায় প্রায় ১৮ হেক্টর জমি জুড়ে এক হাজারেরও বেশি পশুপাখি-সরীসৃপের বাস। তাদের মধ্য থেকে নিজের পছন্দের যে কাউকে দত্তক নেওয়া যায়। প্রথমে বার্ষিক চুক্তিতে দত্তক দেওয়া হত। একটি বাঘ, সিংহ কিংবা হাতি দত্তক নিতে হলে বছরে ২ লক্ষ টাকা দিতে হয়। চিতা, জিরাফের জন্য ১ লাখ। শিম্পাঞ্জি, বাঘরোল, জেব্রা ৩০ হাজার। অ্যানাকোন্ডা ২৫ হাজার, এমু পাখি ১০ হাজার। খরচের বহর শুনে অনেকের সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলাত না। তাই গত সেপ্টেম্বরে চালু হয়েছে মাসওয়াড়ি দত্তকদান। খরচ অনেক কমছে। যেমন বাঘ-সিংহের ক্ষেত্রে তা ২০ হাজার টাকা।
স্বাভাবিকভাবেই উৎসাহের জোয়ার। শিম্পাঞ্জি বাবুকে এবারও বার্ষিক চুক্তিতে দত্তক নিয়েছেন অভিনেতা সপ্তর্ষি মৌলিক এবং অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত। সোহিনী বলেন, “ছোটবেলা থেকে বাবুকে খুব ভাল লাগত। বাবুর টানে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতাম। যখন শুনলাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ পশুপাখি দত্তক দিচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে আবেদন করি। গত বছর থেকে বাবুর দায়িত্ব নিয়েছি। ইচ্ছে আছে, ভবিষ্যতেও বাবুর দায়িত্ব নিতে পারব।”
টালিগঞ্জের বাসিন্দা, হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার হেড কোয়ার্টার্স দ্যুতিমান ভট্টাচার্য একটি হায়নাকে এক বছরের জন্য দত্তক নিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী রোশনি দাস ভট্টাচার্য একটি পেঁচা এবং ইগুয়ানা দত্তক নিয়েছেন। দ্যুতিমানবাবুর পর্যবেক্ষণ, “বাঘ, সিংহ, হাতি, শিম্পাঞ্জি বা ময়ূর, ম্যাকাওয়ের মতো কুলীনদের দত্তক নিতে অনেকে এগিয়ে আসেন। কিন্তু হায়না, শিয়াল, শকুনদের জন্য আগ্রহ কম। অথচ বাস্তুতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে এদেরও সুরক্ষিত থাকা জরুরি।”
রাজ্য জু অথরিটির মেম্বার সেক্রেটারি সৌরভ চৌধুরি বলেন, “খরচ বহন করবে, শুধু এই উদ্দেশ্যে দত্তক প্রক্রিয়া চালু করা হয়নি। বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সুসম্পর্ক গড়ে তোলাই আসল উদ্দেশ্য। তাই সাধারণ মানুষের কথা ভেবে বার্ষিক চুক্তির পাশাপাশি মাসিক চুক্তিতেও পশুপাখি দত্তক দেওয়া হচ্ছে। মাসিক চুক্তিতে খুব ভাল সাড়া মিলছে।”
চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, দত্তক দেওয়া ৬১টি আবাসিকের মধ্যে রয়েছে একটি রয়্যাল বেঙ্গল, দু’টি হাতি, দু’টি ক্যাঙারু, দু’টি জেব্রা, জিরাফ, একটি অ্যানাকোন্ডা, একটি কুমির, দু’টি বাঘরোল-সহ প্রচুর পাখি। তবে ২০২০ সালে লকডাউনের পর থেকে সিংহরা অভিভাবকহীন। আলিপুরে এখন সিংহ মোট চারটে, বিশ্বাস, শ্রুতি এবং তাদের দুই কন্যা ইশা ও নিশা। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লকডাউনের আগে ইংল্যান্ডের বাসিন্দা শেখ ইউসুর রহমান বাঘেদের সঙ্গে একটি সিংহ দত্তক নিয়েছিলেন। চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে সিংহের দত্তক নিতে এখনও পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেননি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.