অভিরূপ দাস: নিষ্ঠুর বললেও কম বলা হয়। অমানবিক, নির্মম, হৃদয়হীন। এইডস আক্রান্ত হওয়ায় স্কুলের স্পেশ্যাল এডুকেটরকে ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দিল কর্তৃপক্ষ। একবিংশ শতাব্দীতে স্কুলের এহেন অমানুষিক আচরণে বিস্মিত শিক্ষক সমাজ।
যাঁর সঙ্গে এ ঘটনা ঘটেছে দিন পাঁচেক আগেই তার বিয়ে হয়েছে। মন ভাল করা সে খবরে উদ্বেগ হয়েছিল রাজ্যবাসী। পাত্রীও যে এইচআইভি পজিটিভ! চার হাত এক হয় মেদিনীপুরের সুনীতা যাদব ও উত্তর ২৪ পরগনার সৌমিত্র গায়েনের। গত রবিবার অগ্নিসাক্ষী রেখে মালাবদল করেন ও সাতপাক ঘোরেন এইডস আক্রান্ত পাত্র-পাত্রী।
বিয়ের পর কাজে যোগ। সেখানেই বিপত্তি। স্ত্রী সুনীতা কাজ করেন একটি ক্যাফেতে। সেই ‘ক্যাফে পজিটিভ’ চালান এইচআইভি পজিটিভ তরুণ-তরুণীরা। কিন্তু নিজের স্কুলে যোগ গিতে গিয়েই মাথায় হাত সৌমিত্রর। অভিযোগ, শুক্রবার স্কুলে যোগ দিতেই কর্তৃপক্ষ ডেকে পাঠায় সৌমিত্রকে। বলা হয়, “কেন অসুখ লুকিয়েছ? অবিলম্বে ছুটিতে যাও।” এমনকী, এও বলা হয়, আদৌ তাঁকে স্কুলে আর রাখা হবে কি না তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, অসুখ ছড়িয়েছে কিনা জানতে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের রক্ত পরীক্ষা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী জানিয়েছেন, বারবার মানুষকে বোঝানো হচ্ছে হাত মেলালে কিম্বা পাশে বসলে এইডস ছড়ায় না। কিন্তু সে কথা যে সবাই বুঝছে না তার প্রমাণ এই ঘটনা।
বিস্মিত হওয়ার মতো ব্যাপার এই স্কুলের কর্ণধার নিজেও একজন ইএনটি বিভাগের চিকিৎসক। উল্লেখ্য ১ ডিসেম্বর বিশ্ব জুড়েই পালন করা হয় এইডস দিবস। এইচআইভি ভাইরাস এবং এর সংক্রমণ সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করতেই এই দিন পালন। সচেতনতা প্রচারে বলা হয়, এইডস রোগীকে ছুঁলে সংক্রমণ ছড়ায় না। কিম্বা তার পাশে বসলেও আক্রান্ত হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। একমাত্র যৌন সংসর্গের মাধ্যমেই এইডস রোগ ছড়ায়। তবুও কেন ওই স্কুলের ছাত্রদের রক্ত পরীক্ষা করা হবে?
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী জানিয়েছেন, পুঁথিগত শিক্ষা থাকলেও কিছু মানুষের সাধারণ জ্ঞানের অভাব রয়েছে। তারই প্রমাণ স্কুলের স্পেশ্যাল এডুকেটরকে ছুটিতে পাঠানো। অভিযোগ শুক্রবার সৌমিত্রকে স্কুলের তরফ থেকে ফোন করে তিনমাস নির্জনে গিয়ে ছুটি কাটাতে বলা হয়েছে। রাজ্যের বিশিষ্ট চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, একদিকে রাজ্য সরকার যখন এইডস নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে চাইছেন সেখানে বেসরকারি স্কুলের এই সিদ্ধান্ত লজ্জাজনক। পার্লামেন্টের এইচআইভি এইডস অ্যাক্ট অনুযায়ী কোনও এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিকে প্রোটেক্টেড পার্সন হিসেবে গণ্য করা হবে। তাকে স্থানীয় প্রশাসন সমস্ত রকম নিরাপত্তা দেবে। কোনওভাবে তাকে কর্মক্ষেত্র থেকে বরখাস্ত করা যাবে না। ইতিমধ্যেই সৌমিত্রকে ছুটিতে পাঠানোর ঘটনার প্রতিবাদে শুরু হয়েছে আন্দোলন। নেট মাধ্যমে জাস্টিস ফর সুনীতা অ্যান্ড সৌমিত্র নামে হাজার হাজার পোস্ট আছড়ে পড়ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.