ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: নীচুস্তরের কর্মীদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করেই জোট চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভোটের আগে থেকেই প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে এ নিয়ে অস্ফুটে অভিযোগ উঠছিল। ভোটে ভরাডুবির পর সেই অভিযোগ প্রকাশ্যে চলে এল। শুক্রবার মৌলালি যুবকেন্দ্রে প্রদেশ কংগ্রেসের ভোট পর্যালোচনা বৈঠকে জোট নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন জেলা এবং শাখা সংগঠনের নেতারা।
প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী বরাবর সিপিএমের সঙ্গে জোটের পক্ষে। অভিযোগ, লোকসভা ভোটেও একপেশেভাবে শুধু উত্তরবঙ্গের কথা এবং নিজের জেলার কথা মাথায় রেখে বামেদের সঙ্গে জোট করেছেন অধীর (Adhir Ranjan Chowdhury)। দক্ষিণবঙ্গের কথা ভাবা হয়নি। জেলা সভাপতিদের কথা শোনা হয়নি। প্রদেশ কংগ্রেসের পর্যালোচনা বৈঠকে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীরের কাছে সেই নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন ব্লক এবং জেলা নেতাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, সিপিএমের (CPIM) সঙ্গে জোট নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ নীচুতলার কর্মীদের মধ্যে। এই সিদ্ধান্ত কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিপিএমের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে অধীর নিজে অবশ্য ধীরস্থিরভাবে সাফাইয়ের সুরে বলেছেন, “এভাবে কাউকে একা দোষারোপ করা যায় না। আপনারা শুধু রাজ্যের কথা ভাবছেন। আমাকে গোটা দেশের কথা ভাবতে হয়েছে। তৃণমূল যেভাবে কংগ্রেসকে আক্রমণ করছিল, তাতে তৃণমূল বিরোধিতাকেই আমার কর্তব্য বলে মনে হয়েছিল।”
এদিন প্রদেশ কংগ্রেসের ভোট পর্যালোচনা বৈঠকে মূলত দুটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে। প্রথমটি, রাহুল গান্ধীকে (Rahul Gandhi) বিরোধী দলনেতা করার প্রস্তাব। যা পেশ করেন রাজ্যে দলের একমাত্র সাংসদ ঈশা খান চৌধুরী। ঈশাকে এদিন সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। দ্বিতীয় প্রস্তাবটি ছিল, প্রদেশ কংগ্রেসে রদবদলের দাবিতে। দ্বিতীয় এই প্রস্তাবটিই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রদেশ কংগ্রেসের প্রভাবশালী মুখ আবদুস সাত্তার এই প্রস্তাব পেশ করেন। এদিনের বৈঠকে যেভাবে দলের জেলা এবং শাখা সংগঠনের নেতারা অধীরের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন, তাতে আগামী দিনে অধীরকে পদ খোয়াতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। যদিও পালটা শক্তি প্রদর্শন করেছেন বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ। খানিকটা অভিমানের সুরেই বলেন, “আমি তো অস্থায়ী সভাপতি। খাড়গেজি দায়িত্ব নেওয়ার বলেছিলেন কাজ চালিয়ে যাও, তাই চালিয়ে যাচ্ছি। সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধীকেও একথা জানিয়েছি।” এদিনের বৈঠকে যারা আমন্ত্রিত ছিলেন, তাঁদের সিংভাগই প্রদেশ সভাপতি পদে বদল চান না। প্রদেশ নেতৃত্ব বদলের প্রস্তাব উঠতেই সমবেত কণ্ঠে অধীরের নামে ধ্বনি দিতে থাকেন তাঁর সমর্থকরা। সূত্রের খবর, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির দৌড়ে ইশা খান চৌধুরী ও প্রদীপ ভট্টাচার্যের নাম উঠে আসছে। এদিনের বৈঠকে ইশাকে ঘিরে দলীয় কর্মীদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো।
দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মীর এদিন বিদ্রোহী শিবিরের অভিযোগ মন দিয়ে শুনেছেন। শুধু তাই নয়, আগামী দুদিন তিনি কলকাতায় থাকবেন শুধু দলের কর্মীদের অভিযোগ শোনার জন্য। মজার কথা হল, এদিনের পর্যালোচনা বৈঠকেও দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া প্রকট হয়েছে। দলের বর্ষীয়ান নেতা আবদুল মান্নান (Abdul Mannan) এদিনের পর্যালোচনা বৈঠকে ছিলেন না। এমনকী কলকাতার কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক এবং প্রদেশ কংগ্রেসের প্রভাবশালী মুখ অমিতাভ চক্রবর্তীকে এদিন আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। অধীরপন্থীদের দাবি, এরা বৈঠকে থাকলে গোলমাল বাঁধার সম্ভাবনা ছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.