ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: প্রেসিডেন্সি জেলের (Presidency Jail) ভিতর গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী জোড়া খুনে অভিযুক্ত যুবক। মৃতের নাম সঞ্জয় দাস। দিদি ও ভাগ্নেকে খুনের অনুশোচনা? না কি জেলের ‘অন্ধকার’ থেকে বাইরে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব, তা বুঝতে পেরেছিল মৃত যুবক? সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে পুলিশের অন্দরমহলে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে পর্ণশ্রীর গোপাল মিস্ত্রি রোডের ফ্ল্যাটে মা সুস্মিতা মণ্ডল ও তাঁর ১৩ বছরের কিশোর পুত্র তমোজিৎ মণ্ডলকে নৃশংসভাবে গলা কেটে খুন করা হয়। এই অভিযোগে সুস্মিতার দুই মাসতুতো ভাই সঞ্জয় দাস ও সন্দীপ দাসকে সাত দিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার করেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। এই ঘটনার ৬ মাসের মধ্যেই প্রেসিডেন্সি জেলের ভিতর গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করল সঞ্জয় দাস। তার ভাই সন্দীপ দাস এখনও জেলবন্দি। এই আত্মহত্যার ঘটনার পর উঠে এসেছে প্রচুর প্রশ্ন।
তবে লালবাজারের এক কর্তা জানান, খুনের অভিযুক্ত আত্মঘাতী হলেও মামলায় তার প্রভাব পড়া উচিৎ নয়। কারণ, এখনও এই মামলায় আরও একজন অভিযুক্ত রয়েছে। সেই সন্দীপ দাসের বিরুদ্ধে মামলা চলবে। যদি সঞ্জয় একাই অভিযুক্ত হত, তবে বন্ধ করতে হত এই মামলা। পুলিশ ও কারা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রেসিডেন্সি জেলের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে খুনের অভিযুক্ত সঞ্জয় দাসের থাকার জায়গা ছিল। গত শুক্রবার দোলের দিন ভোর চারটে নাগাদ এক বন্দি ওয়ার্ডের বাথরুমে গিয়েই আঁতকে ওঠেন। দেখেন, বাথরুমের জানালার শিকের সঙ্গে গামছা বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে সঞ্জয়। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি অন্য বন্দিদের ডেকে বিষয়টি জানান। ছুটে আসেন কারারক্ষীরা। তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। হেস্টিংস থানার পক্ষে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় সঞ্জয় দাসের বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। দেহটি পরিবারের লোকেদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে কারা আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, কিছুদিন ধরে মনমরা হয়ে ছিল সঞ্জয়। যদিও খাওয়াদাওয়া করত। সহবন্দিদের সঙ্গে কথা হত সঞ্জয়ের। কয়েকজন সহবন্দি তাকে জানান, যেভাবে সে তার দিদি ও ভাগ্নেকে নির্মমভাবে গলা কেটে খুন করেছে, তাতে সব প্রমাণই তার বিরুদ্ধে। এই ধরনের খুনের বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ফাঁসি হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। হয়তো সেই কারণেই আতঙ্ক সঞ্জয়কে গ্রাস করেছিল। উল্লেখ্য, পাঁচ হাজার টাকা না চেয়ে পাওয়ার কারণে সঞ্জয় ও সন্দীপ মিলে মাসতুতো দিদি সুস্মিতাকে চা ও কেক খাওয়ার পর গলা কেটে খুন করে। ওই সময় ১৩ বছরের কিশোর অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তমোজিৎ স্কুলের অনলাইন ক্লাস করছিল। সে দুই মামাকে দেখে আনন্দে জড়িয়ে ধরতে যায়। তখনই প্রমাণ লোপাট করতে ভাগ্নের গলা কেটে খুন করে তারা। এই খুনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিল সঞ্জয়। পুলিশের মতে, এভাবে দিদি ও ভাগ্নেকে খুনের পর সম্ভবত অনুশোচনায় ভুগছিল সে। সেই কারণেও সে আত্মহত্যা করতে পারে। এই ঘটনার পর সঞ্জয়ের ভাই সন্দীপ যাতে কোনও অঘটন না ঘটায়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কারা দপ্তর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.