অর্ণব আইচ: বান্ধবীর জন্মদিনের রাতে ‘জয়রাইড’। হেলমেট না পরেই বান্ধবীকে নিয়ে দুরন্ত গতিতেত বাইক চালিয়ে রাতের কলকাতাকে উপভোগ করতে বেরিয়ে মৃত্যুর মুখে তরুণ। বাইপাসের উপর একের পর এক গাড়িকে ওভারটেক করে ‘স্টান্ট’ দেখাতে গিয়েই ডিভাইডারে ধাক্কা খেল বাইক। আর অবধারিতভাবেই প্রাণ হারালেন বছর একুশের অভিষেক রায়৷ গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি তাঁর বান্ধবী মনীষা।
পুলিশ সূত্রে খবর, বাইকটির কোনও রেজিস্ট্রেশন ছিল না। তরুণের বাইকের লাইসেন্স ছিল কি না, পুলিশ তাও জানার চেষ্টা করছে। অভিষেকের পরিবার জানিয়েছে, বাইক চালানোর প্রবল নেশা ছিল তাঁর। বাবার আক্ষেপ, প্রচণ্ড গতিতে ছেলে বাইক চালাত বলে তিনি বাইকের চাবি লুকিয়ে রাখতেন। কিন্তু সেই ছেলে গোপন জায়গা থেকে চাবি বের করে নিয়ে এভাবে বাইক নিয়ে বেরিয়ে যাবে, তা তিনি বুঝতে পারেননি।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাত পৌনে দু’টো নাগাদ এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। অভিষেকের বাড়ি এপিসি রোডে। বান্ধবী মানিকতলার মুরারীপুকুর রোডের বাসিন্দা। পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’বছর আগে অভিষেকের সঙ্গে মনীষার বন্ধুত্ব হয়। মাঝখানে কিছুদিন দু’জনের মধ্যে কোনও যোগাযোগ ছিল না। শনিবার মনীষা ১৮ বছরে পা দেন। জন্মদিনে মনীষার সঙ্গে অভিষেক যোগাযোগ করেন। তিনি বান্ধবীকে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ দেখা করতে বলেন। মনীষা তাঁর খুড়তুতো বোনকে নিয়ে দেখা করতে যান। তিনজন মিলে জয় রাইডে বের হন। জানা গিয়েছে, প্রথমে ভূতনাথ মন্দিরের দিকে যান তাঁরা। এরপর উল্টোডাঙা হয়ে লেক টাউন ও বাইপাসের বিভিন্ন রাস্তায় তাঁরা বাইক নিয়ে ঘুরতে থাকেন। কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জেনেছে, প্রচণ্ড গতিতে বাইক চালাচ্ছিলেন তরুণ। এমনকী, রাস্তায় এক জায়গায় তিনি বাইক দাঁড় করিয়ে মদ্যপানও করেন। এই তথ্য পুলিশ যাচাই করছে। অভিযোগ উঠেছে, অভিষেক আগেও বাইক নিয়ে একবার দুর্ঘটনা ঘটাতে গিয়ে বেঁচে যান। তখনই মনীষার বোনের সঙ্গে তাঁদের বচসা হয়। রাত দেড়টা নাগাদ ওই তরুণী উল্টোডাঙায় নেমে বাড়ি ফিরে যান। অভিষেক ও মনীষা বাইক নিয়ে উল্টোডাঙা থেকে চলে যান। প্রচণ্ড গতিতে বাইপাস ধরে বেঙ্গল কেমিক্যালের কাছে আসেন। বাইপাসে কয়েকটি গাড়িকে পাশ কাটিয়ে ও ওভারটেক করে এগিয়ে চলার সময়ই প্রচণ্ড জোরে বাইপাসের ডিভাইডারে ধাক্কা দেন। বাইকটি একদিকে ছিটকে বেরিয়ে যায়। রাস্তার উপর দু’জন দু’দিকে ছিটকে যান। হেলমেট ছিল না বলে দু’জনেরই মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত লাগে। ওই অবস্থায় কিছুক্ষণ পড়ে থাকার পর পুলিশের কাছে খবর যায়। মানিকতলা থানার পুলিশ গিয়ে দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মাথায় গুরুতর চোট লাগার কারণে হাসপাতালে মৃত্যু হয় অভিষেকের।
মনীষার পরিবারের তরফে পুলিশকে জানানো হয়েছে, তাঁদের মেয়ে এর আগেও রাতে বন্ধুদের সঙ্গে বাইক নিয়ে বের হতেন। এদিনও রাত বাড়তে থাকায় অভিভাবকরা মনীষার মোবাইলে ফোন করেন। এক ব্যক্তি ফোনটি তুলে জানান, মনীষা গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জেনেছে, অভিষেক মাধ্যমিকের পর পড়াশোনা করেননি। তরুণীও পড়াশোনা করতেন না। অভিষেকের নেশা ছিল রাতে প্রচণ্ড জোরে বাইক চালানো। বাড়ির লোকেরা বারণ করলেও তিনি শুনতেন না। পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শহরে রাতে প্রতিনিয়ত নাকা চেকিংয়ে হেলমেট না নিয়ে বাইক চালিয়ে কয়েক হাজার বাইক চালক ও আরোহী ধরা পড়েছেন। তাঁদের ক্লাসও নিয়েছেন পুলিশকর্তারা। ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রকল্পে পুলিশের তরফে হেলমেট নিয়ে বহু প্রচারও হয়েছে। তার পরও কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে উঠল প্রশ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.